জেলার হরিরাপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ বাজারের ওএমএস ডিলার মঙ্গল চন্দ্র সাহা জানালেন, রবিবার সারা দিনে মাত্র ৫০ কেজি চাল বিক্রি করতে পেরেছেন। একই অবস্থা মানিকগঞ্জর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ওএমএস ডিলার মো. তারার মিয়ার। তারা মিয়া শনিবার দিনভর বিক্রি করেছেন মাত্র আশি কেজি চাল। আর রবিবার বিক্রি করেছেন মাত্র ৩৫ কেজি চাল।
তারা বলেন,‘এমনিতে আতপ চাল তার ওপর পোকা ধরেছে। মানুষ চালের অবস্থা দেখা মাত্র আর নিতে চায় না।’
সরেজমিনে শহরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কিছুটা দূরে বিল্টু ক্লাব সংলগ্ন ওএমএস ডিলার মো. তারিক খানের সুধা ট্রেডার্সের গিয়ে কথা হয় পূর্ব দাশড়া গ্রামের ষষ্ট্টি (৪৫) নামে এক নারীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এমনিতে আতপ চাল তার ওপর পোকা ধরছে, মুখে দিলে তিতা তিতা লাগে এই চাল নিয়া কি করুম। রানলে (রান্না) খাওন যাইবো না। এর ল্যাইগ্রা চাল নিতে আইস্যা ফিরা গেলাম।’
একই এলাকার স্বর্ণা (৪০) বলেন,‘আমাগো মানিকগঞ্জের মানুষ আতপ চাল খায় না।সিদ্ধ চাল হইলে নিতাম। এই কথা বলে আর চাল নিলেন না। ওই ডিলার জানালেন বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রায় ১শ’ কেজি চাল বিক্রি হয়েছে।’
তবে মানিকগঞ্জ বাজারের ওএমএস ডিলার হোসেন আলীর ছেলে মো. আলমগীর হোসেনের দোকানের চিত্রটা ছিল কিছুটা ভিন্ন প্রায় আধা ঘণ্টা ওই দোকানে অবস্থান করে দেখা গেলো বেশ কয়েক জন নারী পুরুষ চাল নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে বেউথা এলাকার রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা আতপ চাল খাই না কি আর করা বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।’ তবে এই চালে তিনি সন্তুষ্টি নন।
দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার তারা মিয়ার দোকানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থা করে এক জন ক্রেতারও দেখা মেলেনি।
তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মানিকগঞ্জের লোকজন আতপ চাল খায় না। তার উপর নিম্ন মানের চাল। মুখে দিলে তিতা তিতা লাগে। এছাড়াও কালো এবং সাদা রঙের পোকা ধরেছে। কেউ দেখলে আর মুখে দিলে এ চাল নিতে চায় না।
সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ফোন করলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত তিনি ৩০ কেজি চাল বিক্রি করতে পেরেছেন। ওএমএস ডিলারশিপ নিয়ে তিনি বেকায়দায় পরেছেন। লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত শনিবার দিনভর বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ৮০ কেজি চাল।
শিবালয় উপজেলা উথলী বাজারে ডিলার বিশ্বনাথ শিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন,‘আরে ভাই বইলেন না আতপ চাল নিয়ে মহা ঝামেলায় আছি। কেউ কিনতে আসে না। সারা দিনে মাত্র এক বস্তা চাল বিক্রি করতে পারছি। পুষাচ্ছে না।’
এদিকে ওএমএসের চাল বিক্রির খবর জানতে মোবাইলফোনে কথা হয় ঘিওর উপজেলার গরু হাটের কাছে ওএমএস ডিলার মিজানুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি জানান, সারা দিনে মাত্র ৫০ কেজি চাল বিক্রি করতে পেরেছেন। গত পাঁচ দিনে মাত্র পাঁচ বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলার ওএমএস ডিলার রঘুনাথ সাহার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রচার প্রচারণা কম। এছাড়া আতপ চালের কারণে লোকজনের আগ্রহ কম।
দৌলতপুর উপজেলার ওএমএস ডিলার মো. রিপন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আতপ চাল কেনার ব্যাপারে লোকজনের তেমন কোনও আগ্রহ নেই।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সরকারিভাবে যে ধরনের চালের বরাদ্ধ হয়েছে তাই বিতরণ করা হচ্ছে। ডিলার ও ক্রেতাদের চালের মান নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ওএমএস চালুর পর থেকে মানিকগঞ্জে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি চার টাকা করে কমেছে।
আরও পড়তে পারেন: ইলিশ মাছ পাচারকালে কুমিল্লায় দুই জন গ্রেফতার