X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্য হাতির চলার পথে বসতি, প্রাণহানির ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০২:৪৬আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০২:৫৯

 

বন্য হাতির চলাচলের পথে রোহিঙ্গা বসতি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে গাছ কেটে বসতি স্থাপন করছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। অপরিকল্পিতভাবে এসব বসতি স্থাপন করতে গিয়ে তারা পাহাড় ও গাছ কাটার পাশাপাশি বন্ধ করে দিচ্ছে বন্য হাতি চলাচলের পথ। কুতুপাংল থেকে বালুখালী ক্যাম্প পর্যন্ত এলাকায় হাতি চলাচলের পথে ‘সাবধান, বন্যহাতি চলাচলের পথ’ লেখা সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে। অথচ এসব সাইন বোর্ডের পাশেও অসংখ্য ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। হাতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন, এমন গবেষক ও বন সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এভাবে বসতি স্থাপন করলে হাতি নির্দিষ্ট এলাকায় ঢুকতে বাধা পেয়ে ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। এতে হাতির আক্রমণে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।     

হাতি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. এএইচএম রায়হান সরকার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘হাতির চলাচলের পথে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করায় ‘হিউম্যান-এলিফ্যান্ট কনপ্লিক্ট’ বাড়বে। উখিয়ার মধুছড়া সংরক্ষিত বনে এরইমধ্যে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় হাতির আক্রমণে দুই রোহিঙ্গা মারা গেছে। ওখানে শুধু মানুষ ও হাতির সংঘর্ষ ঘটবে তা নয়, হাতির চলাচল পথ রোধ করায় হাতি আগে যেসব এলাকায় কখনও যায়নি, এখন সেসব এলাকায়ও চলে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আবার হাতি চলাচল করতে না পারলে, নির্দিষ্ট একটা বিচরণ ক্ষেত্রে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। এর ফলে এই পশুর আচরণে পরিবর্তন আসবে। প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে। দীর্ঘদিন এভাবে প্রজনন থেকে বিরত থাকলে ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হাতির বিলুপ্তি ঘটবে।’

এদিকে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হাতির ওপর একটি সমীক্ষা চালায় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার’ (আইইউসিএন)। ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রকাশিত ‘স্ট্যাটাস অব এশিয়ান এলিফ্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বন বিভাগের কক্সবাজার দক্ষিণ (উখিয়া-টেকনাফ) অঞ্চলের সংরক্ষিত বনে শুষ্ক মৌসুমে গড়ে ৭৮টির মতো হাতি থাকে। বর্ষায় গড়ে ৪৮টির মতো  থাকে। এই সময় খাবারের সন্ধানে হাতি অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে আসে। শুষ্ক মৌসুমে আবার অভয়ারণ্যের ভেতরে চলে যায়।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রামে হাতি চলাচলের জন্য ১২ করিডোর রয়েছে। এর আটটি রয়েছে কক্সবাজার এলাকায়। এই প্রতিবেদনে হাতির বিচরণ স্বাভাবিক রাখার জন্য চলাচলের পথ নির্বিঘ্ন করার পরামর্শ দেন।

বন্য হাতি চলাচলের পথ লেখা সাইন বোর্ডে পাশে রোহিঙ্গা বসতি

বিভাগীয় বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা (কক্সবাজার দক্ষিণ) মো. আলী কবির বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফসহ কক্সবাজারের বনাঞ্চলগুলো হাতির আবাস স্থল। হাতি খাবারের সন্ধানে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়া-আসা করে। হাতিগুলো নির্ধারিত রুট দিয়ে চলাচল করে। আমরা টেকনাফ ও উখিয়ার যেসব স্থানে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছি, ওগুলো হাতির চলাচল পথ। হাতি চলাচলের পথে যারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জীবন অবশ্যই হুমকির মুখে। যেকোনও সময় তাদের ওপর হাতি আক্রমণ করতে পারে।

 ‘স্ট্যাটাস অব এশিয়ান এলিফ্যান্টস ইন বাংলাদেশ’  প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ২৬৮টি আবাসিক বন্য হাতি আছে। ৯৩টি মাইগ্রেটরি হাতি আছে। বন্দি হাতি আছে ৯৬টি। যার মধ্যে ৮২টি ব্যক্তি মালিকানাধীন, দেশের দু’টি সাফারি পার্কে আছে ১১টি। বাকি ৩টি মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এই সব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার বিভিন্ন বন-জঙ্গলে বসতি গড়ে।

বন বিভাগ (কক্সবাজার) সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার প্রায় ৪ হাজার একর বনাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া রেঞ্জের কুতুপালং, থাইংখালী ও আশাপাশের ৩ হাজার, টেকনাফ রেঞ্জের ৪৫০ একর,  শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর ও পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর পাহাড়ি জায়গা রোহিঙ্গাদের দখলে রয়েছে। এর বাইরেও কিছু এলাকায় তাদের বসতি রয়েছে।

ছবি:  হুমায়ুন মাসুদ

/জেবি/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরাপত্তা পরিষদে নিজের অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি