X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা-মা হত্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে রোহিঙ্গা শিশু আনাছকে

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
০৭ অক্টোবর ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৩৩

আনাছ মিয়ার কথা শুনছেন প্রধানমন্ত্রী সেদিন সকাল থেকেই ১০ বছরের শিশু আনাছ মিয়ার মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। গ্রামে সেনাবাহিনী হানা দিতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলে মা মোবারেকা ও বাবা নমিউদ্দিনকে সতর্কও করেছিল সে। মা তার কথায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়লেও বাবা বিষয়টিকে তেমন গুরুতই দেননি। তাই রোজকার মতো সেদিনও সকালের খাবার খেয়ে বাবা কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে গিয়েছিল  শিশু আনাছও। কিন্তু শিশুটি তখনও জানতো না, তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ানক পরিস্থিতি। সেদিন বিকালে মাঠের কাজ শেষে বাবার পেছন পেছন বাড়ি ফেরে সে। আর তখনই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলি ছোড়ে তার মা-বাবার দিকে। আনাছের চোখের সামনেই লুটিয়ে পড়ে মা-বাবার মৃতদেহ। তার নাকে-হাতে গুলি লাগে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। জ্ঞান ফিরে আসার পর সে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আশ্রয় নেয় উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

আনাছ মিয়া মা-বাবার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিশু আনাছ মিয়া এই প্রতিবেদককে বলে, ‘সেদিন মাঠে কাজ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। সূর্য তখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। পেটের ক্ষুধা বলে দিচ্ছিল বাড়ি ফিরতে হবে। বাবার পেছন পেছন যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছি, তখনই লোকজনের চিৎকার শুনতে পাই। গ্রামে ঢুকে মিলিটারি ও মগরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। একইসঙ্গে বাড়িঘরে আগুন দিতে শুরু করে। মিলিটারির গুলিতে চোখের সামনেই প্রাণ হারান মা-বাবা। আমার গায়ে, নাকে ও হাতে গুলি লাগে। এরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর তিন ভাই-বোনকে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভাই-ভাই-বোনদের বাঁচাতে পারিনি। তারাও সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেছে।’

মা-বাবা, ভাই-বোন হারানো আনাছ মিয়া কুতুপালং আশ্রয় কেন্দ্রে এসে দাদা-দাদিকে খুঁজে পেয়েছে। তারা আগেই পালিয়ে এসেছিলেন। এখন তাদের সঙ্গেই আছে সে। ক্যাম্পের এমএসএফ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তার অবস্থার উন্নতি হলেও এখনও নাকের ক্ষতটি  শুকায়নি।

বাবা-মা হত্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে রোহিঙ্গা শিশু আনাছকে গত ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শনে কুতুপালং গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় আনাছের। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেন। মমতাময়ী শেখ হাসিনার স্নেহের পরশ পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে শিশুটি। এই প্রসঙ্গে সে বলে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন বার বার মায়ের কথা মনে পড়ছিল।’ কথা শেষ হতে না হতেই চোখের জলের ধারা নেমে আসে তার।

শুধু আনাছ মিয়া নয়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তার মতো প্রায় দেড় লাখ এতিম শিশু। ক্যাম্পের পথে পথে মানুষের সারি, তাঁবুতে তাঁবুতে শিশুর কান্নার রোল। আর পেছনে পড়ে আছে স্বজন হারানোর দুঃসহ জীবনের গল্প। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ সন্তান। কেউ কেউ মা-বাবা। এসব নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ এখনও নিজের ভিটেমাটিতে ফেরার স্বপ্ন দেখেন।  

আরও পড়ুন:


শান্তিতে নোবেলের অংশীদার বাংলাদেশের দুই সংগঠনও
অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার, ট্যারিফ কমিশনের কাজ কী
চরম হতাশার দিন বাংলাদেশের

/এসটি/এমএনএইচ/আপ-এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
২৬ বছরের বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করলেন মামুনুল
২৬ বছরের বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করলেন মামুনুল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা