X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরা গণভবনে গাছ কাটা ‘যৌক্তিক’ দাবি গণপূর্তের

নাটোর প্রতিনিধি
১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২১:০৪আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১২

উত্তরা গণভবনে কেটে ফেলা গাছ (ছবি: নাটোর প্রতিনিধি) নাটোরে উত্তরা গণভবন চত্বরে যুক্তিযুক্ত কারণে এবং নিয়ম মেনেই শতবর্ষী গাছগুলো কাটা ও বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ। যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে সেগুলো ঝড়ে উপড়ে পড়েছিল বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। তবে এসব গাছ কাটার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে মঙ্গলবার নাটোর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে গণভবন চত্বরে কর্মচারীদের আবাসন বন্ধ, গবাদিপশু অপসারণসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উত্তরা গণভবনে গাছ কাটা ও কর্মচারীদের আবাসন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এই বৈঠক হয়। উত্তরা গণভবনে কেটে ফেলা গাছ (ছবি: নাটোর প্রতিনিধি)

উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব, নাটোরের এনডিসি অনিন্দ্য মণ্ডল জানান, গণভবনের  শতবর্ষী গাছ কাটা ও বিক্রির ঘটনায় মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উত্তরা গণভবন সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাৎক্ষণিকভাবে গণভবন চত্বরের ভেতর দায়িত্বরত কর্মচারীদের গবাদিপশুগুলো বের করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া গণভবনের ভেতরে অবস্থানরত সব কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি গণভবনের ভেতরে গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীদের মাধ্যমে তালাবদ্ধ সব এলাকা অবমুক্তকরণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে তা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গাছ কাটার ঘটনা ও এর আগে গণভবনের কিছু কাজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

অনিন্দ্য মণ্ডল এক প্রশ্নের জবাবে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণভবনের ভেতরে শতবর্ষী আম, মেহগনি, কড়ই, সোনালি, বোতল পাম, নারকেলসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি মূল্যবান গাছ রয়েছে। এসব রক্ষার করার দায়িত্ব পালন করছে গণপূর্ত বিভাগের কিছু কর্মচারী। অথচ তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে গণভবনের ভেতরের লাখ লাখ টাকা মূল্যের এসব গাছ নামমাত্র দামে বিক্রি করেছে। সেখানে গবাদিপশু পালন ও অবৈধভাবে বসবাসও করা হয়েছে।’ উত্তরা গণভবনে কেটে ফেলা গাছ (ছবি: নাটোর প্রতিনিধি)

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অনিন্দ্য মণ্ডল বলেন, ‘শুনেছি, টেন্ডারের মাধ্যমে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের ডাল অপসারণ এবং মরা-পচা গাছ অপসারণের জন্য দরপত্রের আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। অথচ অবৈধভাবে কেটে ফেলা হয়েছে মহামূল্যবান ৫-৬টি তাজা গাছসহ প্রায় ২০টি গাছ, যার মূল্য দরপত্রে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে প্রায় শত গুণ বেশি।’

বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান আকন্দ এবং গণভবনে দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দুই-তিনটি ঝড়ে গণভবন চত্বরের ১৩-১৪টি আমগাছ এবং কিছু মেহগনি, সোনালী,কড়ই, একটি বোতল পাম্প এবং একটি নারকেল গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনও কোনও গাছ উপড়ে পড়ে যায়। এ বিষয়ে গত মে মাসে দায়িত্বরত ব্যক্তি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও ওয়ার্ক চার্জ আব্দুস সবুর তালুকদার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে (এসডিই) চিঠি পাঠান। এব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ গণভবনে এসে গাছগুলোর মূল্যায়ন করেন। তিনি তার মূল্যায়ন হিসেবে আম গাছের কাঠ ২৩৩ ঘন ফুট, মেহগনি কাঠ ১০ ঘন ফুট, কড়াই কাঠ ৬ ঘন ফুট, সোনালী কাঠ ৫ ঘন ফুট, বোতল পাম্প গাছ একটি এবং নারকেল গাছ একটি উল্লেখ করেন। এগুলোর মূল্য ধরা হয় ১৫ হাজার ৪২৩ টাকা । মূল্যায়নের ১৫ ভাগ ভ্যাট এবং ৫ ভাগ আয়করসহ মোট মূল্য দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৫০৮ টাকা।

তারা আরও জানান, এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীর অনুমতি সাপেক্ষে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী টেন্ডার আহ্বান করেন। স্থানীয় ঠিকাদার সোহেল-ফয়সাল টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কিনে নেন। এর কয়েকদিন পরই গণভবনে প্রবেশ রাস্তায় আরও দুটি আমগাছ উপড়ে পড়ে। বিষয়টি জানানোর পর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী গাছ দুটির ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একইভাবে নির্দেশনা দেন। তাদের দাবি, তারা শুধু নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে কোনও ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে। কিন্তু এতে তাদের কোনও দুরভিসন্ধি নেই। উত্তরা গণভবন (ছবি: নাটোর প্রতিনিধি)

তবে  জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও গণভবনে দায়িত্বরত কর্মচারীর দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতির গণভবনে আসার কথা ছিল। এ উপলক্ষে গণভবনে বেশ কিছু কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাঠানো হয়। আর ১০ ভাগ টাকা জামানত হিসেবে জমা রাখা হয়। ওই টাকার কাজ করার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কাজটি সঠিকভাবে বা আদৌ করা হয়েছে কিনা তদন্ত করতে মঙ্গলবারের মিটিংয়ে এনডিসিকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া গাছ বিক্রি ও কাটার ঘটনা তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণপূর্ত বিভাগ যা করেছে তা অকল্পনীয়। মিটিংয়ের আগে আমি নিজে গণভবন পরিদর্শন করে কেটে ফেলে রাখা প্রতিটি গাছ দেখেছি। বিশেষ করে তাজা গাছগুলো কাটার প্রমাণ পেয়ে আমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। তাদের এধরনের কাজ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এর ক্ষতি অকল্পনীয়।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন দাবি করেন, রুলস অব বিজনেস এর কথা বলে এতদিন গণপূর্ত বিভাগ নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে আসছিল। গাছ কাটার বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ তাকে জানায়নি, গণভবনে কর্তব্যরত পুলিশ বা আনছারও তাকে অবহিত করেনি। প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবনের গাছ বিক্রি আর অবৈধভাবে কাটার সঙ্গে জড়িতদের  কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন- 

উত্তরা গণভবনের সামনে সরকারি জায়গা দখলের মহোৎসব

উত্তরা গণভবন থেকে মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ

আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ‘উত্তরা গণভবন’

/এফএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের