২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা আবার বৈধভাবে পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরা শুরু করেছে। এ কারণে সোমবার রাজশাহীর বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহও ছিল প্রচুর। তবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা না ধরার জন্য জেলেদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র সাহা জানান, ‘জাটকা সংরক্ষণ করা গেলে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই সবাইকে নিষিদ্ধ সময় (১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত) জাটকা (১০ ইঞ্চির নিচের সাইজের ইলিশ) ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। ’
ডিম ছাড়ার সময় ইলিশ ও জাটকা না ধরলে উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে চলে আসে। পরে পর্যায়ক্রমে রেণু, জাটকা ও বয়সপ্রাপ্ত হলে ইলিশ গভীর পানিতে চলে যায়। তাই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরা হয় ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর। ইলিশ যাতে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে, এ জন্য সরকার ওই ২২ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।’
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পার হওয়ার পরপরই জেলের ইলিশের খোঁজে পদ্মায় জাল ফেলছে এবং প্রত্যাশিত ইলিশও পেয়ে খুশি। সোমবার বাঘা পয়েন্ট থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার ১০৫ কিলোমিটার সীমানায় পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরার ধুম পড়েছিল। এর ফলে রাজশাহীর সাহেব বাজার ও নিউমার্কেট এলাকায় ইলিশ মাছের সরবরাহ ছিল প্রচুর। রাজশাহীর পবা উপজেলার একেক জন জেলে সারা দিনে ৫ থেকে ৭ কেজি করে ইলিশ ধরেছেন বলে তারা জানায়। তবে ইলিশের আকার ছিল ছোট ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত।
গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার, মহিশালবাড়ী, ডাইংপাড়া, সারাংপুর, ভগবন্তপুর ও রেলগেটসহ বিভিন্ন বাজারে পদ্মার ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, যেসব মাছ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তা টাটকা নয়। অধিকাংশ মাছে বরফ দেওয়া রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শামশুল করিম বলেন, ‘যেহেতু নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে এজন্য মাছ ধরা, বহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে মৎস্য অধিদফতর কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তবে পদ্মা নদীতে কারেন্ট জালসহ কিছু জাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব অবৈধ জাল আটক করতে মৎস্য অধিদফতরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর গ্রামের জেলে ওলিউর রহমান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর পদ্মা নদীতে ছোট-বড় জাল দিয়ে অর্ধশতাধিক জেলে মাছ শিকার করছেন। আমি সোমবার সকাল থেকে ১০ কেজি ইলিশ ধরেছি। এছাড়া সবাই মিলে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ মন ইলিশ ধরেছি।
আলাইপুর গ্রামের জেলে জহুরুল ইসলাম, চকরাজাপুর গ্রামের আবদুর রব খাঁ, আফজার হোসেন, মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিকার করা মাছের মধ্যে ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের মাছ সাড়ে চারশ’ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া আড়াই’শ গ্রাম থেকে শুরু করে সাড়ে চারশ’ গ্রাম ওজনের মাছ দুইশ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এই মাছগুলো ফড়িয়ারা কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারে ও গ্রামে বিক্রি করেছে।
বাঘা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন,‘নিষিদ্ধ সময়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করার দায়ে এক জেলের সাত হাজার টাকা জরিমানা, দুই জনের জেল দেওয়া হয়েছে। ২২ দিন অভিযান চালিয়ে দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ৮০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। মাছগুলো গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
চারঘাট উপজেলার রাওথা গ্রামের আফজাল হোসেন জানান,‘মা ইলিশ সংরক্ষণ ও মৎস্য অভিযান চলায় আমরা কষ্টে ছিলাম। ওই সময় বিশেষ সহায়তা হিসেবে ২৭৯ জন জেলেকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হয়।
সরদহ ও পিরোজপুরের বাবু আকতার জানান, নদীতে ইলিশসহ প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে, আমরা খুব খুশি।
রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার রংধুন অফসেট প্রেসের মালিক তাজুল ইসলাম বলেন,‘সোমবার মাছের বাজারে গিয়ে অবাক হয়েছি। বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছে পদ্মায় প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। দামও কম।একটি বড় ইলিশের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।’
আরও পড়তে পারেন: জেলা পরিষদের কর্মচারীসহ পাঁচ জনকে পেটালেন উপজেলা চেয়ারম্যান