X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান কাটা শুরু, ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
০৮ নভেম্বর ২০১৭, ০০:০০আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ০১:৪৮

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা (ছবি- প্রতিনিধি)

মাঠজুড়ে সোনালি ধান। কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ কেউ ভাড় করা ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠোনে। দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। মহাব্যস্ততায় দিন কাটছে কৃষকদের। ধান কাটা শুরু হওয়ায় এই চিত্র দেখা গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার নওগাঁ জেলায় দুই লাখ ১৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে বন্যায় ৩৮ হাজার ৪৩৮ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি এ জেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে নাটোর জেলায়ও। এ জেলায় ৬৬ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে বন্যায় ৯ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যায় তিন হাজার ৬৫২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৪৮ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এ জেলার বেশিরভাগ জমির ধানে পাক ধরায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় এবার আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর। এর মধ্যে বন্যায় দুই হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকাল পর্যন্ত এ জেলায় পাঁচ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ১৮ টন চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় চার হাজার ৬৫০ হেক্টরের মধ্যে ২৩৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন দুই দশমিক ৯৯ শতাংশ। পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩৫০ হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন তিন দশমিক ২৬ শতাংশ। চারঘাট উপজেলায় চার হাজার ৬০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩১৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ। বাঘা উপজেলায় ৬৪৫ হেক্টরের মধ্যে ১২৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন দুই দশমিক ৭ শতাংশ। পবা উপজেলায় আট হাজার ৬৬২ হেক্টরের মধ্যে ৯৪৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন দুই দশমিক ৯ শতাংশ। তানোর উপজেলায় ২১ হাজার ১৪০ হেক্টরের মধ্যে দুই হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ধানের ফলন তিন দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়া মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায় দুই হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। তবে এখানে এখনও ধান কাটা শুরু হয়নি। গোদাগাড়ী উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৯০ হেক্টরের মধ্যে এক হাজার ৬৭০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা (ছবি- প্রতিনিধি)

সূত্র জানায়, নগরীর মতিহার ও বোয়ালিয়া থানায় এবার ৩২ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দুই থানায় আট হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি মতিহারে ধানের ফলন দুই দশমিক ৭ শতাংশ ও বোয়ালিয়ায় ধানের ফলন দুই দশমিক আট শতাংশ।

গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ মণ পর্যন্ত ধান উৎপাদিত হয়েছে। আর হাট বাজারে প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯শ’ টাকায়। ফলন ভালো হওয়ায় তারা অনেক খুশি।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৭ মণ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫৬, বিনা-৭, স্বর্ণা ও ভারতীয় জাত হুটরা চাষ হয়েছে বেশি। এর মধ্যে স্বর্ণা জাতের ধান চাষ হয়েছে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে।

এ উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের হাতিবান্ধার কৃষক জাকির হোসেন ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ইজারার টাকাসহ খরচ হয়েছে ৯ হাজার।

হাতিবান্ধার কৃষক জাকির হোসেনের পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ১৮ মণ ধান। তিনি প্রতি মণ ধান বাজারে বিক্রি করেছেন ৯শ’ টাকা দরে। তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘায় উৎপাদিত ধান ও খড় (আউড়) বিক্রি করে তার আয় হয়েছে ২৪ হাজার ৬শ’ টাকা। অর্থাৎ ধান চাষ করে বিঘা প্রতি তার লাভ হয়েছে ১৫ হাজার ৬শ’ টাকা।

গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নের মালকামড়ার কৃষক আবদুল্লাহ ৩৫ বিঘা জমিতে স্বর্ণা ও ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকা করে। ১০ বিঘা জমির ব্রি-৪৯ ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছেন ১৭ মণ।

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা (ছবি- প্রতিনিধি)

উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের নবগ্রামের কৃষক আবদুস সুকুর ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হলেও ধান পেয়েছেন ১৮ মণ। প্রতি মণ ধান ৮৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। ধান কাটা-মাড়াই শেষে জমিতে সরিষা ও গমের চাষ করবেন বলেও জানান তিনি।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা মরিয়ম আহম্মেদ বলেন, ‘ব্রি-৪৯ জাতের ধানের জীবনকাল ১৩৫ দিন হলেও ২৫ দিন আগেই ধানের উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে। অন্য জাতের ধানও জীবনকালের চেয়ে আগাম পেকে যাওয়ায় প্রতি বিঘায় ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ব্রি-৪৯ ধানের ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মণ, ব্রি-৫১ ধানের ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ মণ, ব্রি-৫৬ ধানের ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ মণ, বিনা-৭ ধানের ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ মণ, স্বর্ণা ধানের ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ মণ, হুটরা ধানের ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মণ। খেতে সুস্বাদু ও দেখতে চিকন হওয়ায় এসব জাতের চালের চাহিদা অনেক।

তানোর উপজেলার সগুনা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান ৩২ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন। ১০ বিঘা জমিতে পাতামরা (ব্যাকটোরিয়ার ব্লাইড) রোগ দেখা দেওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এসব জমিতে প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে মাত্র পাঁচ মণ ধান।

চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ (ছবি- প্রতিনিধি)

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর, পাকড়ী ও গোগ্রাম ইউনিয়নের কিছু এলাকায় জমিতে বাদামি ফড়িং (কারেন্ট) পোকার আক্রমণে ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। কৃষকরা জানান, ধানে বাদামি ফড়িং পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করে ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রতি বিঘায় দুই থেকে তিন মণ ধান উৎপাদন কম হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে গোদাগাড়ীর কৃষি কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশই জমির ৮০ ভাগ আমন ধান পেকে গেছে। এসব ধান এখনই কাটতে হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো সেচ-সার জমিতে দেওয়ায় পোকা ও রোগ বালাই কম দেখা দিয়েছে। এ কারণেই ধানের ফলন ভালো হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের চার জেলায় ছয় শতাংশ জমির আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমি সোমবার (৬ নভেম্বর) নওগাঁ জেলা ঘুরে দেখেছি। জমিতে ধান পেকে গেছে। বেশ কয়েক জন কৃষকের সঙ্গে কথাও বলেছি। তাদের অনেকে জানিয়েছেন, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। অনেকে আবার জানান, শ্রমিকের অভাবে সেভাবে ধান কাটা শুরু করতে পারেননি তারা। আশা করছি, ফলন ভালো হবে।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা