X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘কলেজে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারি না’

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১১আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৪৩

সিএনজি অটোরিকশায় করে চাচার আব্দুল কুদ্দুসের সাথে সিলেটের সিআরপি থেরাপি সেন্টারে যাচ্ছেন খাদিজা।

‘খুব মনে পড়ছে কলেজের বান্ধবীদের, যাদের সঙ্গে দিনের পর দিন আড্ডা দিয়েছি, একইসঙ্গে কলেজে গিয়েছি। আমি অসুস্থ হওয়ায় তাদের সঙ্গে একটু দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তারা সবাই ব্যস্ত। কলেজে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু যেতে তো পারি না। সুস্থ হতে আমার আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তারপর আবারও শুরু করবো লেখাপড়া। লেখাপড়া শেষ করে ব্যাংকার হবো। পাশাপাশি অবহেলিত নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবো।’ সিলেটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির আঘাতে আহত কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবেই তার মনের কথাগুলো বলেন।

সিলেট সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মাশুক মিয়ার একমাত্র কন্যা নার্গিস। তার বড়ভাই শাহীন আহমদ চীনে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছেন। আর তার ছোট দুই ভাই স্থানীয় স্কুলে পড়াশুনা করছে। নার্গিসের বাবা ও বড় ভাই প্রবাসে থাকার কারণে তাদের পরিবারের দেখাশোনা করছেন চাচা আব্দুল কুদ্দুস। প্রতিবার তিনি নিজে সিএনজি অটোরিকশা করে নার্গিসকে থেরাপি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন সিলেট নগরের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজডে (সিআরপি)।

শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টায় নার্গিসদের বাড়িতে বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় তার। নার্গিস বলেন, ‘প্রথম প্রথম বন্ধুরা সবসময় আমার খোঁজ নিতো। ব্যস্ত থাকার কারণে এখন আর আগের মতো কেউ পাশে নেই।’

হামলাকারী সেই ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের বিষয়েও কথা বলেন নার্গিস। তিনি বলেন, ‘সিলেটের আদালতে বদরুলের যে রায় হয়েছে উচ্চ আদালতেও যেন সেটি বহাল থাকে। সরকার ও বিচারকদের কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এই রায় বহাল থাকলে ভবিষতে দেশে এরকম আর কোনও ঘটনা ঘটবে না। সবার মাঝে ভয় থাকবে।’

খাদিজা

নার্গিসের চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরোপুরি সুস্থ হতে নার্গিসের আরও এক বছরের চিকিৎসা প্রয়োজন বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। চাপাতির আঘাত যে হাতে লেগেছে সেই হাতে সে কোনও কাজ করতে পারছে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী গত দেড় মাস ধরে নার্গিসের থেরাপি চলছে। আর দু’মাস পর তার হাতের অপারেশন করার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. এনকে দত্ত।’

আব্দুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি নার্গিসের আগ্রহ খুব বেশি। এখনও সে পড়াশোনা শুরুর কথা আমাদের বলে। তবে আমরা তার কথার পাশ কেটে অন্য কথায় চলে যাই। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে কলেজে যেতে দেওয়া হবে না। সে যদি আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকে তাহলে আমাদের পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। আগে তার সুস্থ হওয়াটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’

বদরুলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের আদালত থেকে বদরুলের যাবজ্জীবনের যে রায়টি হয়েছে সে রায় যেন উচ্চ আদালতেও বহাল রাখা হয় এটা আমাদের পরিবারের প্রত্যাশা। কারণ নার্গিসকে নিয়ে আমরা কিভাবে দিনযাপন করছি তা আমরা ছাড়া আর কেউ বোঝার নয়।’

বাড়ির সামনে চাচা ও ফুফাতো ভাইয়ের সাথে হাস্যজ্জল খাদিজা

নার্গিসের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের মুখে হাসি দেখলেই পুরো অন্তর জুড়িয়ে যায়। আগের তুলনায় নার্গিস এখন অনেক সুস্থ রয়েছে। সে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তাকে আর কোথাও যেতে দেবো না। অনেক কষ্ট করছে মেয়েটা আমার।’ পড়াশোনার শুরুর ব্যাপারে নার্গিস প্রায়ই কথা বলেন জানতে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়েটা প্রায় সময়ই বলে কলেজে যাবে, পড়াশোনা করবে। আমরা তাকে কোনোমতে বুঝিয়ে রেখেছি। যদি সে পুরোপুরি সুস্থ হয় তাহলে তার ইচ্ছাতেই সব কিছু হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল ইসলাম। এ ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। বদরুলকে একমাত্র আসামি করে সিলেট মহানগরীর শাহপরাণ থানায় মামলা করেন নার্গিসের চাচা আবদুল কুদ্দুস। এ ঘটনার জেরে বদরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ওই বছরের ৫ অক্টোবর সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। ৮ নভেম্বর খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার এসআই (সাবেক) হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট গৃহীত হয়। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের আদালতে সাক্ষ্য দেন নার্গিস। এ মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষ্য দেন।

২০১৬ সালের ৭ মার্চ সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলায় একমাত্র আসামি বদরুল ইসলামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। এছাড়াও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিচারক নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলাটির রায় বাংলায় লিখে ঘোষণা করেন।

 

 

 

/এফএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন