X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন্ত ফসিল হয়ে এখনও টিকে আছে ‘টাইপরাইটার’

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০১আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১০

টাইপ করেই সংসার চালাচ্ছেন ওয়াকার আহমেদ লাড্ডান

বেশিদিন আগের কথা নয়। দুই দশকেরও কম সময়। তখন টাইপিস্টদের বেশ কদর ছিল। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে দিনভর খটখট শব্দে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা। দলিলপত্র থেকে পত্রিকায় খবর বা যেকোনও নথি লিখতে দৌড়াতে হতো টাইপিস্টদের কাছে। আর দক্ষ হাতে চোখ বন্ধ করেও কি-বোর্ডে ঝড় তুলতেন টাইপিস্টরা। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে টাইপরাইটারের প্রচলন কমতে কমতে এখন তা উঠেই গেছে প্রায়। টাইপিস্টদের ব্যস্ততাও নেই আগের মতো।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টাইপরাইটারের জায়গা দখল করেছে কম্পিউটার। টাইপিস্টদের অনেকেই জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করে কম্পিউটার অপারেটর হয়ে গেছেন। তবে এখনও পুরনো পেশা ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার ওয়াকার আহমেদ লাড্ডান তাদেরই একজন। প্রায় ২৪ বছর ধরে টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করছেন গোলাহাটের বাসিন্দা লাড্ডান।

মূলত সৈয়দপুর উপজেলায় তিনিই এখন একমাত্র টাইপিস্ট। আজও  টাইপরাইটারে টাইপ করে গোটা পরিবারের খরচ বহন করছেন তিনি। বার্ধক্যের কারণে তার বাবা নেছার আনছারী কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন লাড্ডান। উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন টাইপরাইটারকে। সময় বদলে যাওয়ার পরেও পেশা বদল না করার বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন তিনি।

নীলফামারী জেলা জজ আদালতের বারান্দায় টাইপের কাজ করেন লাড্ডান। কাকডাকা ভোরে আদালতের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই কাটে সারাদিন। এখন আগের মতো কাজ না থাকায় বেশিরভাগ সময় অলস কাটে। তবুও টাইপ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া। মাত্র তিন থেকে চার মিনিটে একটি পাতা টাইপ করে আয় করেন ২০ টাকা।

ওয়াকার আহমেদ লাড্ডান

এ ব্যাপারে বাংলা ট্রিবিউনকে লাড্ডান বলেন, ‘আগের মত টাইপের কাজ এখন আর হয় না। ১৯৯৩ সালে আদালতে পেশাদার টাইপিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন এ কাজের প্রচুর চাহিদা ছিল। টাইপ করানোর জন্য লাইন ধরে থাকতেন লোকজন। আয়-রোজগারও ভালো ছিল। দিন গেলে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো সেসময়। আর এখন সারা দিনে দুইশ’ টাকা আয় করাও মুশকিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালত চত্বরে প্রায় ২০ জনের মতো টাইপিস্ট কাজ করতাম আমরা। এখন এই নীলফামারী জেলা আদালত প্রাঙ্গণে টাইপিস্টের সংখ্যা মাত্র তিন জন। তবে যন্ত্র পুরনো হলেও, টাইপরাইটারের কদর এখনো ফুরিয়ে যায়নি। আদালতের কিছু নোটিশ এবং নথিপত্র আছে, যা টাইপরাইটার ছাড়া কম্পিউটারে করানো সম্ভব নয়। তাছাড়া বিদ্যুৎ চলে গেলে টাইপের কাজের কদর বাড়ে বলেও জানান তিনি।’

কম্পিউটারের যুগে টাইপরাইটার দিয়ে জীবিকা নির্বাহের কারণ জানতে চাইলে লাড্ডান বলেন, ‘টাইপের কাজ না থাকায় জীবন চালানো কষ্টকর হয়েছে সত্য, কিন্তু মনের সাথে এর একটা স্থায়ী সম্পর্ক হয়ে গেছে আমার। কম্পিউটার কিনতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। হয়তো একদিন টাকা জমা করে সেটাও হবে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ পুরনো টাইপরাইটারটি মুছতে মুছতে এসব কথা বলেছেন তিনি।

জানা যায়, সৈয়দপুরে টাইপিস্টদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও গড়ে উঠেছিল একসময়। শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডে অবস্থিত অক্সফোর্ড কমার্শিয়াল কলেজ নামক প্রতিষ্ঠানে সেসময় টাইপের কাজ শিখতে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসতেন। একইসঙ্গে কোর্ট-কাছারি, অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র টাইপ করা হতো সেখানে।

অক্সফোর্ড কমার্শিয়াল কলেজের শিক্ষক মো. ফিরোজ বাংলা ট্রিউিনকে বলেন,‘একদিকে টাইপিস্টের কাজ অন্যদিকে টাইপ প্রশিক্ষণের আয় দিয়ে গত কয়েক বছর আগে ভালো চলছিল জীবন। প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র টাইপ করার জন্য ও প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু সময়ের চাহিদায় অনেক আগেই টাইপরাইটার সরিয়ে ফেলেছি আমরা। এখন সব কাজ কম্পিউটারে হয়। মানুষও এখন কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাড্ডান টাইপিস্টও একসময় এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। তিনি আজও  টাইপ করার কাজকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই ছিলেন বাংলা টাইপিস্ট ও কিছু ইংরেজি টাইপিস্টও ছিল।

 

/এসকেবি/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ