X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে ভাসমান হাসপাতাল কবে হবে?

আবুল হাসান, মোংলা
২১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২৩আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৪৪

সুন্দরবন, ছবি: সংগৃহীত দীর্ঘ ২২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় ১০টি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ। সুন্দরবনের ভেতরে কর্মরত বাওয়ালি, জেলে, মৌয়াল, বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় বনের ভেতর এবং সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষ পাচ্ছেন না ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে ওই এলাকার মানুষদের মৌলিক মানবাধিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন থেকে নিকটবর্তী শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মংলা, শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর দূরত্ব প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সেকেলে।

সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বনের ভেতর কর্মরত কোনও মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার চিকিৎসা সেবার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা তো রয়েছেই। তাছাড়া বিষধর সাপ ও বাঘসহ বিভিন্ন হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণে সুন্দরবনে প্রবেশ ও বিচরণ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ এসব মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে দীর্ঘদিনেও গড়ে ওঠেনি কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।’

জানা গেছে, সুন্দরবনের ভেতরে কর্মরত বন বিভাগের মাঠ কর্মীসহ শতাধিক বনজীবী মানুষ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা যান। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষই বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মী।

সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের (সদর) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশির আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০০৯ সালের ১ জুন সুন্দরবনের মরা ভোলা ক্যাম্পে কর্মরত থাকাকালীন বনদস্যুদের অতর্কিত গুলিতে আফসার উদ্দিন মোল্লা নামে একজন নৌচালক গুরুতর আহত হন। পরে জরুরি চিকিৎসার অভাবে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। একই ঘটনায় গুরুতর আহত শাহ আলম নামের একজন বনরক্ষী প্রাণে বেঁচে গেলেও, তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে তিনি একটি চোখ হারান।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন বিভাগের মাঠকর্মী ছাড়াও, জেলে,বাওয়ালি, মৌয়ালসহ বিভিন্ন শ্রেণির বনজীবী মানুষ বিভিন্ন সময় জরুরি চিকিৎসার অভাবে মারা যান। এছাড়া সুন্দরবনের ভেতর সপরিবারে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিবারিক সদস্যরা হঠাৎ করে কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়লে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এক কথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই তাদের সপরিবারকে সেখানে থাকতে হয়।’

বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ১৭ ডিসেম্বর দুবলার চরে কর্মরত অবস্থায় হারুন-অর রশীদ, ২০০৮ সালের ১০ মে সুন্দরবনের গেওয়াখালী টহল ফাঁড়িতে সুভাষ চন্দ্র মজুমদার, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুবলার চরে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও জলোচ্ছ্বাসে আহত হয়ে সাইদুর রহমান, ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি সুন্দরবনের নোটাবেকী টহল ফাঁড়িতে কর্মরত অবস্থায় মাহবুবুর রহমান, ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের হরিনটানা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকালে জাফর আলী খাঁন, কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রে কাওসার আলী চিকিৎসার অভাবে মারা যান।

সুন্দরবনের কাছের চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের ওলিয়ার রাহমান বলেন, ‘আমার এলাকায় অন্তত ১০ হাজার জেলে রয়েছেন, যাদের জীবিকার সংস্থান আসে সুন্দরবন থেকে। তারা ১২ মাসই বনের ভেতরে নদীতে পড়ে থাকেন। হঠাৎ অসুখ-বিসুখে পড়লে সেখানেই তাদের অনেককে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’

সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরের জেলে আল আমিন বলেন, ‘মাছ ধরার জন্য চরে ছয় মাস থাকি। এজন্য আমাদের কাছ থেকে রাজস্ব নেয় বন বিভাগ। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ বা আহত হলে চিকিৎসাসেবা মেলে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৯৯৫ সালে সুন্দরবন বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রজেক্ট (এসবিসিবি) বা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের খালি জায়গায় বাগান স্থাপন, বিদ্যমান বাগানের উন্নয়ন ও বনের ওপর থেকে চাপ কমাতে বনজীবীদের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করার চিন্তা করা হয়। একই প্রকল্পের অধীনে সুন্দরবন অঞ্চলে ১০টি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বন বিভাগের যথাযথ ভূমিকার অভাবে এডিবি অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ফলে ২০০৩ সালে গোটা প্রকল্পই মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৬ সাল নাগাদ প্রকল্পের সকল কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়। আর সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ভাসমান হাসপাতাল ও বনাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতর হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দূরবর্তী এলাকায় বনরক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এই মুহূর্তে ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণে বনবিভাগের কোনও পরিকল্পনা নেই।’

 

/এসএনএইচ/টিএন/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী