X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জের তিনটি সেতু

আমির হুসাইন স্মিথ, নারায়ণগঞ্জ
২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:২০আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৫০

অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জের তিনটি সেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া, উল্লাবো ও দক্ষিণ মাসাবো এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি সেতু। কিন্তু সেখানে অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। সংযোগ সড়ক না থাকায় অনেকখানি ঘুরে যাতায়াত করতে হয় তাদেরকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের মাধ্যমে (পিআইও ) উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কায়েতপাড়া, উল্লাব, মুসড়ি এবং দক্ষিণ মাসাবো এলাকায় ছোট ছোট খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কায়েতপাড়া, উল্লাব ও দক্ষিণ মাসাবো এলাকায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বটে কিন্তু, গত দুই বছরেও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
কায়েতপাড়া এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া জানান, ২০১৫ সালের শেষের দিকে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া খালের ওপর প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুনির্মাণ করা হয় । কায়েতপাতা, পূর্বগ্রাম, কাজিবাড়ি, নগরপাড়া গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় নৌকা দিয়ে খাল পার হতে হচ্ছে।
একই এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন ও জাফর আলী জানান, সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পিআইও অফিসে বার বার ধরনা দেওয়ার পরও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি ।
পূর্বগ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা নুসরাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতু বাস্তবায়নের আগে উচিত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা। কিন্তু এখানে চিত্রটা পুরোই উল্টো। সেতু নির্মাণ হয়েছে দুই বছর আগে অথচ সংযোগ সড়ক নেই। এমন সেতু নির্মাণ সরকারের অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির চিত্রই ফুটে ওঠে।
একই অর্থ বছরে উল্লাব বিলের মাঝে একটি ছোট খালের ওপর নির্মাণ করা হয় আরও একটি সেতু। কিন্তু সেতুর দুই পাশে রাস্তা এবং সেতুতে ওঠার অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় সেতুটি কাজে আসছে না ।
স্থানীয় বাসিন্দা সুবাস চন্দ্র ঘোষ, সাহেব আলী, আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন জানান, উল্লাব থেকে কায়েতপাড়া হয়ে নগরপাড়া যাওয়ার জন্য এই রাস্তার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। রাস্তা বানানোর আগেই সেতুটি বানানো হয়। কিন্তু, গত দুই বছরে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতুটি মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না। রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে উল্লাব ও কায়েতপাড়া দুটি সেতুর ব্যবহার হতো।
২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মুসড়ি এলাকায় মুসড়ি খালের ওপর আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। যেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তার পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও কেন এই খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেটি এলাকাবাসীরও বোধগম্য নয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলেই এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জের তিনটি সেতু
একই চিত্র দেখা গেছে তারাবো পৌরসভার দক্ষিণ মাসাবো এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো ) খালের ওপর। যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ- নরসিংদী (এনএনডি) বেরিবাঁধ শুরু। সেতুর পশ্চিম পাশে কোনও রাস্তা নেই। কাশফুল বন আর ইরি-বোরো জমি। আর সেতুর ডানে-বামে ফসলি জমি। স্থানীয়রা জানান, এখানে সেতু নির্মাণের কোনও প্রয়োজন ছিল না। মানুষ চলাচলও করে না। সেতুটি পড়ে আছে প্রায় দুই বছর ধরে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আবেদ আলী বলেন, ‘ আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র দুই মাস হলো। কয়েকদিন আগে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে নিয়ে কায়েতপাড়া এলাকায় একটি সেতু পরিদর্শন করেছি। সেই সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু টাকা বাকি রয়েছে। শিগগিরই সেখানে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। ’
এসময় উল্লাব, মুসড়ি, দক্ষিণ মাসাবো সেতুর কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘ আমার আগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছিলেন আওলাদ হোসেন, তিনি এসব সেতু করে গেছেন। যদি মানুষের প্রয়োজন ছাড়া বা অসৎ উদ্দেশে সেতু নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও ) আবু ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের (পিআইও) উদ্যোগে কায়েতপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকায় বেশ কিছু সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কায়েতপাড়াসহ দুটি সেতু নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেছি সেখানে অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব রাস্তা বা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য চলতি অর্থ বছরে কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে তা সম্পন্ন করা হবে। মানুষের প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তি স্বার্থে বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে সেতু নির্মাণ করা হলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এআর/ টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী