X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ শর্তে চাঁদপুরের সেই স্কুল মাঠে মেলা করার প্রস্তাব

ইব্রাহিম রনি, চাঁদপুর
২২ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪১আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১১:০৯

২৪ শর্তে চাঁদপুরের সেই স্কুল মাঠে মেলা করার প্রস্তাব অবশেষে এক মাসের পরিবর্তে ২০ দিনের জন্য ২৪ শর্তে চাঁদপুরের শহরের সেই স্কুল মাঠেই ২৬তম মেলা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করার জন্য অনুমতি দিতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছে জেলা পুলিশ।

যদিও জেলা ম্যাজিস্ট্রেজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত মেলার অনুমতি দেননি। জেলা প্রশাসন অনুমতি না দিলেও নভেম্বরের শুরু থেকেই স্কুল মাঠটি দখলে রেখে মেলার স্টল নির্মাণ করছে আয়োজকরা। এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের ধারণা ছিল এবার এ স্কুল মাঠ থেকে মেলাটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে। সবশেষ চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিজয় দিবসের সভায় বিজয় মেলা স্থান পরিবর্তনের দাবি করা হয়েছিল। জন দুর্ভোগের কথা উঠে এসেছিল সভায়। স্কুল মাঠ দখল করে এ মেলা নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে কয়েকদিন ধরেই।

মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে এবার জেলা পুলিশ যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, যাত্রা, ভেরাইটি শো, অশ্লীল ও জনগণের বিরক্তিকর কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। নাগরদোলা, হাউজি, লাকি কুপন, কোনও ধরনের র‌্যাফেল ড্র, পটকাবাজি করা যাবে না। মেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের চলাচলের মূল রাস্তা থেকে ১২ ফুট মাঠ ছেড়ে দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। মেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। মেলায় নারী-পুরুষের আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকতে হবে। প্রবেশ পথে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর মেশিনের সাহায্যে দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিজয় মেলা মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ক আলোচনা, দেশাত্মবোধক নাচ-গান, আবৃত্তি ছাড়া অন্য কিছু চালানো যাবে না। মেলায় স্থাপিত স্টলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শনের সমাহার থাকতে হবে। মাঠের মাঝখান দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে এবং এখানে কোনও স্টল ও নাগরদোলা থাকতে পারবে না। সরকারের নীতিবিরোধী কোনও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না। স্কুলের কোনও কার্যক্রম থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে মেলার কার্যক্রম চালাতে হবে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চালানো যাবে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিআইও-১ বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে এবার শর্ত সাপেক্ষে ৮ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করার জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবেন কতদিন দেওয়া যায়।’

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়। চাঁদপুর মুক্ত দিবস থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলতো বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে মেলার মেয়াদ দিন কয়েক বাড়ানো হলেও ২০০০ সালের পর থেকে এই মেলার সময় বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে বাড়ে স্টলের সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের এ বিজয় মেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্টল রয়েছে মাত্র একটি আর বাণিজ্যিক স্টল রয়েছে ১৩২টি। বিজয় মেলাকে বাণিজ্য মেলায় পরিণত করতে জুতার দোকান, পুতুল নাচ, ব্লেজারের দোকান, দা-ছেনি-কুড়ালের দোকান, চশমার দোকান, খাবারের দোকান, ব্যাগের দোকানসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন স্টলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই বিদ্যালয় মাঠে এভাবে মাসজুড়ে মেলা করা হলে আশপাশের পাঁচটি বিদ্যালয় ও কলেজের বহু শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন বেশ ভোগান্তির শিকার হয়। তারা মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। প্রতি বছর ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী এ বিদ্যালয় মাঠে মেলা চলায় শহরে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। মেলায় মাইকের শব্দ ও লোকজনের শোরগোলে হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় ছাড়াও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠদানসহ পরীক্ষা নিতেও সমস্যা হয়। হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় ও হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাও বন্ধ রাখতে হয়।

নানা সংকট বিবেচনা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদও এই স্থানে মেলা করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মেলা অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যাপারে প্রায় এক দশক ধরে দাবি তুললেও এবার সেই দাবি জোরালো হয়েছে। মেলার স্টিয়ারিং কমিটি, উদযাপন পরিষদ, বিভিন্ন উপ-পরিষদের অনেক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাও স্থান পরিবর্তনের ব্যাপারে জোরালো দাবি করে আসছেন।

মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা জানান, এ মেলাটি শুরুর দিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ স্টলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন অনেক তথ্যবহুল জিনিসপত্র ছিল। যেসবের মধ্যে ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তমাখা শার্ট, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র, যুদ্ধপরবর্তী মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্মৃতি। কিন্তু ধীরে ধীরে মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন লোক তাদের পকেট ভরতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ স্টলটিকে ছোট করে ফেলে এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র সরিয়ে এখানে তারা কৌশলে বাণিজ্যিক স্টল বসায়। যেগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সঙ্গে কোনওভাবেই সম্পৃক্ত নয়। এসবের বিরুদ্ধে অনেকে কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

যদিও মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদ দাবি করেছেন, দেশের অন্যান্য মেলার চেয়ে এ মেলা আদর্শিক স্থানে রয়েছে।

আরও পড়ুন: স্কুলের মাঠে বিজয় মেলার নামে বাণিজ্য মেলা!

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা