খারাপ আবহাওয়ার কারণে পর পর তিনবার মাদারীপুর জেলার শাক-সবজি ও ফসলের ক্ষেত নষ্ট হলেও দমে যাননি কৃষকরা। চতুর্থবারের মত লাগানো ফসলে তারা এখন সাফল্যের হাসি হাসার অপেক্ষায়। মাদারীপুর জেলার মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন শাক-সবজির সমারোহ। কৃষি বিভাগের দাবি, গত কয়েক বছরে কৃষি ও পতিত জমিতে বাড়ছে শাক-সবজির চাষাবাদ। জেলায় শাক-সবজির চাষ এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ধান ও পাটের জন্য বিখ্যাত হলেও শাক-সবজির জন্য দক্ষিণাঞ্চলের আশপাশের জেলার ওপর নির্ভরশীল মাদারীপুর। তবে এ বছর মাঠে মাঠে আমন ধানের পাশাপাশি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, খিরাই, ঢেঁড়স, বেগুন, লাল শাক, পালং শাক, মূলা, করল্লাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ফলন উঠতে শুরু করেছে। এবারের শীত মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে পর পর তিনবার মাদারীপুরের কৃষকদের শাক-সবজির ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। তবে দমে যাননি কৃষকরা। চতুর্থবার চাষাবাদের পর একটু দেরিতে হলেও এখন বাড়তি লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
মাদারীপুর শহর সংলগ্ন রাস্তি ইউনিয়নের চরপুটিয়া গ্রামের শাহ জালাল ও তার স্ত্রী বাড়ির পাশে ও পতিত জমিতে শাক-সবজি লাগানো শুরু করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই পরিবারের সবাই গত তিন বছর ধরে বাড়ির পাশের ধান ও পাটের ক্ষেত এবং পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষ করছেন। এমনকি তাদের আশেপাশের বাড়ির লোকজনও সবজি চাষে সফলতা পাচ্ছেন।
সবজি চাষি রেবা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশে যে জমি খালি থাকতো, ধান-পাট চাষ হতো না, সেখানে এখন সবাই চাষ শুরু করেছেন। কারণ একটু কষ্ট করলেই প্রতিটি কৃষক পরিবার এই শীত মৌসুমে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা আয় করতে পারছেন।’
এদিকে জেলার শহরের পাশের ঘটমাঝি ইউনিয়নের গৈদি বিল এলাকা ও পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর, কালিকাপুর ইউনিয়নের চরণাচনা ও হোসনাবাদ, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচরসহ প্রায় সব এলাকাতেই মাঠগুলো ভরে গেছে শীতকালীন ফসলে।
মহিষেরচর এলাকার কৃষক নূরুদ্দিন মাতুব্বর বলেন, ‘লাল শাক, পালং শাক ও লাউসহ যেসব শাক-সবজি চাষ করি; তা বিকালে তুলে শহরের পুরানবাজার নিয়ে নগদ দামে বিক্রি করতে পারছি। এছাড়া কেউ কেউ লেকেরপাড়ে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য।’
মাদারীপুরের নতুন শহর এলাকার বাসিন্দা কাওসার হোসেন বলেন, ‘কৃষকরা মাঠ থেকে শাক-সবজি নিয়ে শহরে আসে। বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এসব তাজা জিনিস কৃষকদের কাছে থেকে আমি কিনি। শহরের অনেকেই কিনে থাকে।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জি এম এ গফুর জানান, মাদারীপুর জেলায় গত বছর তিন হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির ফলন হয়েছিল। এবারের অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হলেও তাদের দৃঢ় মনোভাবের কারণে জেলায় এবার শীতকালীন শাক-সবজির ফলন গতবারের চেয়ে বেশি। এছাড়া কৃষকরা লাভবান হওয়ায়, তারাও পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষে ঝুঁকছেন বলে জানান তিনি।