X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরজুড়ে বিনা চাষে রসুন

কামাল মৃধা, নাটোর
২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:০৬আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৬

নাটোরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনা চাষে রসুন ‘বিনা চাষে রসুন আবাদে দ্বিগুণ লাভ। খাটনি কম, খরচও কম। আর অন্য ফসল আবাদ করে খরচের টাকাই ওঠে না। খালি খালি পরিশ্রম করা। এজন্য এখন প্রত্যেক বছর রসুনই আবাদ করি।’
নিজ ক্ষেত থেকে রসুন তুলতে তুলতে কথাগুলো বললেন নাটোর সদর উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের লক্ষীকোল গ্রামের কৃষক সাহাদ আলী।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনা চাষে রসুনের আবাদ বেশ পরিচিত। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় নাটোরের কৃষকদের মধ্যেও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিংড়া ছাড়া এ জেলার সদর, লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গার ২৫ হাজার ৭শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় মাঠের পর মাঠ জমিতে তারা নানা ধরনের ফসল আবাদ করতেন। বাম্পার ফলনও হতো। কিন্তু বাজারে ভালো দাম পাওয়া যেতো না। এখন আর সে চিত্র নেই। প্রায় প্রতিটি উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এখন রসুন আবাদের ধুম চলছে। বাজারে ভালো দামও মেলে। তাই বিনা চাষে রসুন আবাদ করে তারা সুদিনের দেখা পেয়েছেন। কেবল তারা নন; অল্প পরিশ্রমে বেশি মুনাফা মেলে বলে রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
কৃষকরা আরও জানান, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেজা মাটিতে তারা রসুনের বীজ বপণ করেন। এক্ষেত্রে চাষ ও সেচ দেওয়ার দরকার হয় না। রসুনের চারা গজানোর কিছুদিন পর একবার শুধু নিড়ানি দিয়ে সার দেন। তারপর আর কোনও কাজ নেই। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর রসুনের গোলা বড় হয়ে গেলে সেগুলো তুলে নিয়ে আসেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম উপজেলায় প্রথম বিনা চাষে রসুন চাষ শুরু হয়। ওই সময় রসুন চাষিদের সংখ্যাটা কম ছিল। পরে এই অল্প সংখ্যক চাষিদের দেখাদেখি অন্যরা রসুন আবাদে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এখন সিংড়া ছাড়া বাকি ছয় উপজেলায় রসুনের উৎপাদন হচ্ছে।
রসুনের আবাদে মাঠে ব্যস্ত কৃষকরা সরেজমিনে সদর উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, এখানকার পিপরুল ইউনিয়নের লক্ষীকোল, দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ইসলাম বাড়ি-খামার ও একই ইউনিয়নের বাকশোর বিলে রসুন চাষ হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গা উপজেলার অধিকাংশ মাঠেও একইভাবে রসুনের আবাদ হচ্ছে।
লক্ষীকোল গ্রামের কৃষক জয়নাল জানান, আমন ধান কাটার পর জমিতেই রসুন চাষ করেন তার গ্রামের মানুষরা। রসুন বোনার কাজে সাহায্য করে তাদের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলেরাও।
লালপুর বাজারের পাশের মাঠেই রসুন চাষে মগ্ন কলেজছাত্র রাকিব জানান, রসুন চাষে শ্রমিক পাচ্ছেন না তার বাবা। তাই বাবার সঙ্গে মাঠে রসুন চাষ করতে এসেছেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধুও রসুন চাষে সহায়তা করছেন।
গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র তুহিন জানান, রসুন চাষ অনেক সহজ। এতে কোনও বাড়তি পরিশ্রম নেই। মুনাফা বেশি মেলে বলে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে রসুন চাষের কাজ করছেন তিনি। প্রতিদিন রসুন চাষ করে তিনি ৩০০-৩৫০ টাকা পান।
রসুন চাষ করে স্বাবলম্বী নারী শ্রমিক মিনারা খাতুন জানান, বছরের অন্যান্য সময় তারা খুব একটা কাজ পান না। তবে রসুন চাষ শুরু হলে মাঠে মাঠে কাজের ধুম পড়ে। তখন কাজেরও অভাব হয় না। তবে তার অভিযোগ, পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় তারা কম পারিশ্রমিক কম পান।
স্থানীয় কৃষক রানা আহম্মেদ জানান, বিনা চাষে রসুন আবাদে হেক্টর প্রতি তাদের ২০০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া জমিতে গোবর সার ১০ টন, জিপসাম ১০০ কেজি, বোরাক্স ১০ কেজি ও জিংক সার ২০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে বড়াইগ্রামে প্রথম বিনা চাষে রসুনের চাষ শুরু হয়। কার্তিকের আমন-আউশ মাসে ধান কাটার পরই নরম জমিতে রসুনের কোয়া লাগানো হয়।
লালপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর ইসলাম খান বলেন, ‘দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিতে রসুনের চাষ ভালো হয়। কিছুদিন আগেও লালপুরে বিনা চাষে রসুন আবাদ তেমন একটা ছিল না। পাশের বড়াইগ্রামে এই পদ্ধতিতে রসুনের চাষ দেখে এ উপজেলার কৃষকরা রসুন চাষে উৎসাহিত হন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, দিন দিন জেলার চাষিরা রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবছর মোট ২৫ হাজার ৭শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে। আর গত বছর জেলায় ২৬ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ থেকে দেড় হাজার হেক্টর বেশি জমিতে রসুনের চাষ হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকদের গড়ে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় গড়ে ৩২-৩৩ মণ। এবছর প্রতিমণ রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। এতে চাষাবাদ সংক্রান্ত খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ভালোই লাভ করেন।
আরও পড়ুন-
আগাম আলুর দাম কম, হতাশ নীলফামারীর চাষিরা

/এসকেবি/এমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা