X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোড়ামারা আজিজের মৃত্যুদণ্ড: সন্তুষ্ট এলাকাবাসী, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বাদী ও সাক্ষীরা

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৩আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৪

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গাইবান্ধার-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি ও জামায়াত নেতা আবু সালেহ মো. আবদুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন গাইবান্ধার সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মামলার বাদী ও সাক্ষীরা।

তাদের আশঙ্কা, যে কোনও সময় জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে জীবননাশের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। এজন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মামলার সাক্ষী ধর্মপুর গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঘোড়ামারা আজিজ যে বর্বরতা চালিয়েছেন সেই অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। তবে রায় ঘোষণা হওয়ায় জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের ওপর ক্ষেপে উঠেছে। এ চক্রটি যে কোনও সময়ে তাদের পরিবারের ওপর হামলাসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটাতে পারে। এজন্য পলাতক ঘোড়ামারা আজিজসহ অপর আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করতে হবে।’  

মজুমদার গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামে অপর এক সাক্ষী বলেন, ‘ঘোড়ামারা আজিজের অনুসারীসহ জামায়াত-শিবিরের অনেক সন্ত্রাসী এলাকায় অবস্থান করছে। প্রতিদিন তারা সুযোগ মতো এলাকায় ঘোরাফেরা করে। এ কারণে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ রায় কার্যকর হলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কলঙ্কমুক্ত হবে।’ পাশাপাশি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির দাবিসহ আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

মামলার আরেক সাক্ষী মজুমদার গ্রামের বাসিন্দা রাজা মিয়া বলেন, ‘মামলার সাক্ষী হওয়ার পর থেকে হুমকি-ধামকির মধ্যে দিনাতিপাত করছি। বিভিন্ন সময় আসামিদের অনুসারীরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলার রায় ঘোষণা হওয়ায় তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।’ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারিসহ সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।  

মামলার বাদী আনিছুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর ঘোড়ামারা আজিজসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ট্রাইব্যুনালের এমন রায়ে সবাই খুশি হয়েছেন। দ্রুত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করতে হবে। তাহলে তারা আরও খুশি হবেন।’ তবে দ্রুত রায় কার্যকরসহ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ভাইকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা অপর একটি মামলার বাদী আজিজার রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে বড় ভাই বয়েজ উদ্দিনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। ঘোড়ামারা আজিজের নেতৃত্বে তার বাহিনীর রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, আবদুল লতিফ, আবু মুসলেম মো. আলী, নাজমুল হুদা ও আবদুর রহিম মিয়া আমার ভাইকে হত্যা করে। হত্যার অভিযোগে মামলা করে এতোদিন পর ন্যায্য বিচার পেয়েছি। এখন আসামিদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করলেই তার ভাইয়ের আত্মার শান্তি হবে বলেও জানান তিনি।   

ঘোড়ামারা আজিজ

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ের সাবেক কমান্ডার এমদাদুল হক বাবলু মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পরেও ঘোড়ামারা আজিজের নেতৃত্বে তার বাহিনী ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এছাড়া বাড়িঘর লুটপাট করে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া, অত্যাচার-নির্যাতন ও ধর্ষণের অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে চার পুলিশকে হত্যার ঘটনায় ঘোড়ামারা আজিজের ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির আদেশের রায় ঘোষণা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা হানাদারমুক্ত দিবস। তাই ১০ ডিসেম্বরের আগেই  ঘোড়ামারা আজিজসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকরের জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।’  

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাইবান্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা। ঘোড়ামারা আজিজসহ আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকারের ভূমিকায় ছিলো। তাদের সবার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা খুশি হয়েছেন। তবে এখনো জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা, মামলার বাদী ও সাক্ষীর পরিবারের ওপর যে কোনও সময় সহিংসতা ও তাণ্ডব চালাতে পারে। তাই নাশকতা রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘মামলার বাদী, সাক্ষীসহ মামলার সঙ্গে জড়িত সবার ব্যাপারে আগ থেকেই খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি থানায় ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে। রায় ঘোষণার আগ থেকে তাদের বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। তাছাড়া এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।’ যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান ওসি। 

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘মামলার বাদী ও সাক্ষীসহ জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য তৎপর রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাই ভয়ের কোনও কারণ নেই। এছাড়া জামায়াত-শিবিরসহ যে কোনও চক্র যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে।’

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড

কে এই ‘ঘোড়ামারা’ আজিজ

 

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!