X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটক, রাজস্ব আদায়ে ধস

আবুল হাসান, মোংলা
২৫ নভেম্বর ২০১৭, ০২:৪৭আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪৪

সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটক, রাজস্ব আদায়ে ধস অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আর দর্শনীয় কিছু না থাকায় সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা। পর্যাপ্ত পর্যটকের অভাবে গত পাঁচ অর্থ বছরে এ খাত থেকে বনবিভাগ বড় অংকের রাজস্ব হারায়। এ অবস্থায় নিরাপত্তা সংকটের পাশাপাশি সুন্দরবন কেন্দ্রিক বড় কোনও পর্যটন প্রকল্প না থাকায় সুন্দরবনে পর্যটক ও রাজস্ব আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের পর্যটন স্পট ‘করমজলের’ ষ্টেশন কর্মকর্তা আজাদ কবির।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মাছ, কাঠ, মধু থেকে বিপুল রাজস্ব আসে। এর পাশাপাশি বড় অংকের রাজস্ব আসে পর্যটকদের কাছ থেকে। কিন্তু নানা কারণে সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। আর এতে করে প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে। গত ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ এ পাঁচ অর্থ বছরে সুন্দরবন থেকে পর্যটনখাতে অন্তত কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
আজাদ কবির আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ও অন্যতম দর্শনীয় এ বন দেশের রাজস্ব আয়ের দিক থেকেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে, ২০১২-১৩ সালে সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ৩ হাজার ৮৫৪ জন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা নেমে এসেছে ২ হাজার ১২৯ জনে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৬৫ জন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৩ হাজার ৭শ৪১ জনে পৌঁছালেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ফের কমে ২ হাজার ৫৩৭ জনে নেমে যায়।
সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটক, রাজস্ব আদায়ে ধস শুধু বিদেশি নয়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরের পরে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর পর্যন্ত দেশি পর্যটকও পড়তিতেই ছিলো। ২০১২-১৩ সালে সুন্দরবনে দেশি পর্যটক সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৬০ জন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে নেমে ৭৫ হাজার ৭৪২ জনে দাঁড়ায়। তবে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কিছুটা বেড়ে ৭৭ হাজার ৪৭৩ জন দেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দেশি পর্যটক আরও বেড়ে হয় ৯১ হাজার ৮২১ জন। তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দেশি পর্যটক সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩৪ জনে। যদিও বিদেশি পর্যটকদের বেশি রাজস্ব দিতে হয় বলে দেশি পর্যটক বাড়লেও সুন্দরবনের রাজস্ব আয় আগের চেয়ে কমেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা সত্যজিৎ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১২-১৩ অর্থ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া মোট রাজস্ব ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯০ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে যা কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৬০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ২৭০ টাকায় পৌঁছালেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ফের ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮০ টাকায় নেমে যায়। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয় ৮২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬১০ টাকা, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২১ লাখ টাকা কম। এ হিসেবে গত পাঁচ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে অন্তত কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক আসা কমে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যা। পর্যটকদের প্রথমত প্রয়োজন হয় একটু হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার। সেই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইজারা দেওয়া পিকনিক কর্নারে ও বন বিভাগের রেস্ট হাউস সংলগ্ন জায়গাতেও নেই একটি বিশ্রামাগার কিংবা যাত্রী ছাউনি।
সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটক, রাজস্ব আদায়ে ধস শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) ঝিনাইদহ থেকে সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা রেশমা আক্তার এবং ময়মনসিংহ থেকে আসা সাদিয়া আক্তার জানান, নারী-পুরুষ, শিশু ও বয়স্কদের পর্যটন স্পটকেন্দ্র করমজল অথবা হাড়বাড়িয়ায় যাওয়ার সময় ফেরিঘাট থেকে নৌযানে উঠতে হবে, কিন্তু নৌযানে ওঠার মতো কোনও ঘাট এখানে নেই। ঘাট না থাকায় পর্যটকরা নৌযানে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। নৌযান মালিক ও স্টাফরা টানাহেঁচড়া করেই যাত্রীদের নৌযানে তুলছে। নৌযানে উঠতে গিয়ে পর্যটকদের যে হয়রানির শিকার হতে হয় তাতে আর তাদের বন দেখার শখ থাকে না।
খুলনা থেকে আসা সম্রাট নামে একজন পর্যটক জানান, সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তারক্ষী দিতে পারলেও নেই গাইডের ব্যবস্থা। একজন নিরাপত্তাকর্মী নিতে হলে এর জন্য বন বিভাগকে আলাদা টাকা দিতে হয়। অনেকেই টাকার অভাবে নিরাপত্তারক্ষী নিতে পারে না। এজন্য তাদের ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে বন ভ্রমণ করতে হয়।
সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে ফিরে যাওয়া ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক পর্যটক আবু বাছেদ তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে জানান, সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা গেলেও এর মধ্যে তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হওয়ায় অনেক আনন্দই ম্লান হয়ে গেছে। সুন্দরবনে ভ্রমণে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটকদের কোনও হয়রানি করা হ য়না। তবে পর্যটন স্পটগুলোতে অবকাঠামোগত অনেক ঘাটতি আছে। পর্যাপ্ত বাজেট পেলে পর্যায়ক্রমে পর্যটন স্পটগুলোতে জেটি ও অবকাঠামো নির্মাণসহ উন্নত ও আধুনিকায়ন করা হবে। তারপরও বর্তমানে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে পর্যটক আসলে আমরা সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা বন বিভাগের করি।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা