X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি
২৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৫:২৮আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৭:৪৮

আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বাগেরহাটের পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে দ্য ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে ব্যাংকের ৩০/৩৫ জন গ্রাহক (অর্থ লগ্নিকারী) বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। গ্রাহকদের মধ্যে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার লোক রয়েছেন। তারা ৫০ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা জমা রাখেছিলেন।
তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভালো।
জানা গেছে, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার শিকারপুর গ্রামে। ২০১২ সালে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে সফি মার্কেটের তিন তলায় সাইবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। বর্তমানে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির ৩৪টি শাখা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের গ্রাহক মোকাদ্দেস আলী বলেন, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা সঞ্চয়ের (এফডিআর, ডিপিএস) নামে উচ্চহারে মুনাফা দেওয়ার কথা বলে মূলধন সংগ্রহ করে। ফিক্সড ডিপোজিটে এক লাখ টাকায় মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। ওই ফাঁদে পা দিয়ে ব্যাংকে টাকা রাখেন কয়েকশ গ্রাহক। পরে প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমোদিত না জানতে পেরে গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাওয়া শুরু করেন। কিছুদিন পর ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদার পালিয়ে ভারতে চলে যান। পরে গ্রাহকরা জমা রাখা টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ওই সময়ে বাসুদেব দে নামে এক গ্রাহক নিহার রঞ্জন হালদারকে ভারত থেকে ধরে এনে বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী স্বাধীন শেখকে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থানান্তর করে দশানী এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তবে গ্রাহকরা পাওনা ফেরৎ চাইতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, সাবেক ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে চলে গেছেন তাই আমরা টাকা ফেরৎ দিতে পারবো না।

সংবাদ সম্মেলন শেষে মোকাদ্দেস আলী বলেন, ‘লাখে মাসে দুই হাজার টাকা করে মুনাফা পেতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি দুই দফায় মোট তিন লাখ টাকা জমা রাখি। আমি টাকা জমা রাখার প্রথম চার মাসে মোট ২৪ হাজার টাকা লভ্যাংশ তুলেছি। এরপর কর্তৃপক্ষ লভ্যাংশ দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে। আমার দেখা দেখি অনেকেই এখানে টাকা জমা রাখেন। আমরা কয়েকশ গ্রাহক মূলধন হারিয়ে এখন সর্বশান্ত। প্রশাসনের কাছে যেয়েও কোনও প্রতিকার পাচ্ছি না।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার পশ্চিমডাঙ্গা গ্রামের হাসিব হাওলাদার বলেন, ‘২০১৬ সালে দুই দফায় ছয় লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। আমার কথায় বোন শাহীনুর বেগমও তিন লাখ টাকা জমা রাখেন। প্রথম ছয় মাস আমি মুনাফা (লভ্যাংশ) তুলেছিলাম। কিছুদিন পরেই তারা টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করলে আমি আমার মূলধন ফেরত চাই। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বাধ্য হয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি মামলা করি। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু পুলিশ এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি।’

গ্রহকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যাংকের বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. স্বাধীন বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তা ব্যাংকে জমা করেননি। পরে টাকার হিসাব চাইলে তিনি গত আগষ্ট মাসে পালিয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘ চলতি বছরের ২৯ মার্চ গ্রাহকরা মূলধন ফেরত পেতে আমাকে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে বসিয়েছেন। আমি ইতোমধ্যে ২১৫ জন গ্রাহকের ১৫ লাখ টাকা ফেরত পেতে সাহায্য করেছি। পর্যায়ক্রমে অন্যদের টাকাও ফেরত পেতে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন:
সুন্দরবনে কমছে দেশি-বিদেশি পর্যটক, রাজস্ব আদায়ে ধস

/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা