X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার ছেড়ে পালায় হানাদাররা

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
০৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:১৭আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৮

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের বেশিরভাগ অঞ্চল হানাদারমুক্ত হয়। জেলার চা এর জনপদ শ্রীমঙ্গল,  ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা কমলগঞ্জ, আগর আতরের এলাকা বড়লেখা, হাওর এলাকা রাজনগর এবং সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ী মুক্ত হয় একাত্তরের এই দিনে।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে পালায় এবং স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান মুক্তিযোদ্ধারা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর তৎকালীন সংসদ সদস্য আলতাফুর রহমান, কমান্ডার মানিক চৌধুরী ও ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। ২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সামনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সেদিন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এ অঞ্চলের নিরীহ চা শ্রমিকরাও। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে ৩০ এপ্রিল হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে গণহত্যা চালায় তাদের ওপর। যুদ্ধের বাংকার বানানোর কথা বলে শহর সংলগ্ন ভাড়াউড়া চা বাগানে প্রবেশ করে সেখানে এক সঙ্গে ৫৫ জন চা শ্রমিককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাঁচটি বধ্যভূমির মধ্যে অন্যতম এই ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে ১৯৯৭ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি সেটি। সাধুবাবার বটতলী হিসেবে পরিচিত বধ্যভূমিটি সম্প্রতি সংস্কার করে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে গড়ে তোলা হলেও অন্যগুলো পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়। সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত নেই এসব বধ্যভূমির কোনোটিতে।

কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে কমলগঞ্জের দখলদারিত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই এখানে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুগত ৬০ জনের একটি দল তৈরি করে উপজেলার শমশেরনগর বিমান ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণের কাজ চলতে থাকে।

১০ মার্চ ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলের নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা মৌলভীবাজারে অবস্থান নেয়। ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনারা ভানুগাছ থেকে শমশেরনগরে আসে। এ সময় মুক্তিসেনাদের অতর্কিত আক্রমণে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ হানাদারদের ২টি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসে। এ উপজেলায় পাত্রখোলা, ধলাই ও ভানুগাছের যুদ্ধও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বড়লেখা মুক্ত দিবস

’৭১ এর ৬ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় বড়লেখায় উড়তে থাকে বাংলার লাল সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় জুড়ী, কুলাউড়া ও বিয়ানীবাজারের চেয়ে বড়লেখায় বেশি নারী নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা ৪ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল। ৬ মে পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলাকে হানাদারমুক্ত রাখতে ৪ নং সেক্টরের বারপুঞ্জি ও কুকিরথল সাব-সেক্টরের মুক্তিসেনারা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমে জুড়ী বাজারে এবং পর্যায়ক্রমে বড়লেখা সদর, শাহবাজপুর, লাতু, সারপার, হাকালুকি, ছোটলেখাসহ অন্যান্য স্থানে বড় বড় ক্যাম্প স্থাপন করে। বিভিন্ন ইউনিয়নেও গড়ে তোলে অনেক স্থায়ী এবং অস্থায়ী ক্যাম্প। ৯ মাসের যুদ্ধে বড়লেখার পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রণাঙ্গনে অংশ নেন। এদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অপারেশনে বড়লেখার ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ বিসর্জন দেন। পঙ্গুত্ববরণ করেন ২০ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধা। লাতু-সারপার যুদ্ধ, শাহবাজপুর যুদ্ধ, হাকালুকি যুদ্ধ, ধামাই চা বাগান যুদ্ধ, ছোটলেখাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। জুড়ীতে অবস্থানরত কয়েকশ হানাদার মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পালাতে বাধ্য হয় ৬ ডিসেম্বর।

জুড়ী মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে জুড়ী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। একাত্তরের ১ ও ২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের রানীবাড়ী সাব-সেক্টরের অধীনস্ত ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। তাদের আক্রমণে শত শত পাকিস্তানি সেনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ৬ ডিসেম্বর হানাদাররা এই এলাকা ছাড়ে।

রাজনগর মুক্ত দিবস

রাজনগর উপজেলা পাকিস্তানি সেনাদের দখলমুক্ত হয় একাত্তরের এই দিনে। যৌথবাহিনীর কামান্ডার কর্নেল এমএ হামিদ প্রথম লাল সবুজের বিজয় পতাকা ওড়ান রাজনগরে। এর আগে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে রাজনগর বিজয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৬ ডিসেম্বর ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালাতে শুরু করে হানাদাররা।  এসময় মুক্তিবাহিনীর হামলায় বহু পাকিস্তানি সেনা মারা যায়।

রাজনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সজল চক্রবর্তী জানান, সম্প্রতি এখানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। মুক্ত দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পন, পতাকা উত্তোলন, র‌্যালি ও যুদ্ধের স্মৃতিচারণ নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি