ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ ও নিরাপত্তার দাবিতে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ৫ ছাত্রী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বুধবার বিকাল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে হামলার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
জানা গেছে, বহিরাগতদের উৎপাত ও নিরাপত্তার দাবিতে আইএইচটির ছাত্রীরা বুধবার সকাল ১০টার দিকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে অবরুদ্ধ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। পরে পুলিশ আন্দোলনরত ছাত্রীদের অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে আসার সময় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত এক ছাত্রী জানান, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনসহ তার অনুসারীরা ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন, অকথ্য ভাষায় গালাগালি এমনকি যৌন হয়রানিও করে আসছে। তাদের এমন আচরণের কারণে গত ৩ নভেম্বর ছাত্রলীগের নারীকর্মীরা তাদের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়নি। তারা নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য বের হলে জাহিদ ও তুহিন হলের গেটে বাইরে থেকে তালা দেয়। তাদের নগর ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানেও যেতে দেওয়া হয়নি। এসময় তারা দুই নারী ছাত্রলীগ কর্মীকে চড়থাপ্পড় মারে। এরপর থেকে হলের সাধারণ ছাত্রীসহ নারী ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদেই ছাত্রীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
আইএইচটি’র ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি জাহিদুর ইসলাম বলেন, ‘ল্যাব মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একই বিভাগের শিক্ষার্থীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় আমাদের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ ছাত্রলীগের এই নেতা ছাত্রীদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকায় পরিস্থিতি বেশিদূর গড়াতে পারেনি। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইএইচটি ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আইএইচটি’র অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন দাবি নিয়ে ছাত্রীরা আমার কাছে এসেছিল। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাদের হোস্টেলের ভেতরে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।’ তবে হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি কোনও কথা বলেননি।
অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পরে তাৎক্ষণিকভাবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়। সভা শেষে রাজশাহী আইএইচটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের বুধবার বিকাল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়া হবে।’