X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমিটিবিহীন চবি ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:২২আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:১৮

চবি-ছাত্রলীগ দুই দফায় স্থগিতের ঘোষণা দিয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের লাগাম টানতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংগঠন। উল্টো কেন্দ্রীয় সংগঠনের সর্তকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট দখল, টেন্ডার বাণিজ্য ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত আড়াই বছরে শতাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে তাদের মধ্যে।

সবশেষ গত ৬ ডিসেম্বর আবারও সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। যদিও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। প্রশ্ন উঠেছে— এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বিশৃঙ্খল চবি ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, নাকি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে?

সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, খুব দ্রুত নতুন কমিটি করা না হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংগঠিত এই সংঘর্ষ আরও বাড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক এই ইউনিটে দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিটি থাকার পরও অনেক সময় জুনিয়রদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কিন্তু কমিটি না থাকলে কেউ কারও কথা শুনবে না। এতে নিজেদের মধ্যে মারামারি আরও বাড়বে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। কথা কাটাকাটিসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় প্রতিদিনই তারা ছোটখাট মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে তাদের থামানো যেতো। কিন্তু এখন সেই দায়িত্ব নেবে কে? এখন তো কেউ কাউকে মানবে না।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিবিরের শক্ত ঘাঁটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনঠাসা হতে থাকে ছাত্রশিবির। বেশ কয়েক দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ২০১৫ সালে ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছাত্রলীগ। ওই বছরের ২০ জুলাই আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। স্থানীয় রাজনীতিতে সুজন মহানগর আওয়ামী লীগ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আর টিপু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে দুই গ্রুপ। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে শাটল ট্রেনের বগি ও ক্যাম্পাসভিত্তিক কমপক্ষে ১৩টি উপ-গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে তারাই উন্নয়ন কাজের দরপত্র ভাগাভাগি, নিয়োগ বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তার, হলের সিট ও বগি দখল নিয়ে জড়িয়েছেন একের পর এক সংঘর্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসের সামনে ও শাহ আমানত হলে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন গ্রুপ। এতে ছয় জন আহত হয়। এর জের ধরে পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আবারও সংঘর্ষে জড়ান তারা। তখন আহত হয় তিন জন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম দফায় কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় সংগঠন।

স্থগিতাদেশের পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা বাদ পড়েন। এজন্য সভাপতি টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সুজনকে অভিযুক্ত করে পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনকারীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে রাখে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামে এসে বাদ পড়া নেতাকর্মীদের নামের তালিকা নিয়ে যান। পরে ১ আগস্ট পুনরায় ২৬১ সদস্যের বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবন নির্মাণে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর সঙ্গে বিরোধে জড়ান নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ৭৫ কোটি ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রায় ২০ কোটি টাকার দরপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে ওই সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই নেতার অনুসারীরা। তাদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।

দরপত্রের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ২৯ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলের সামনে কুপিয়ে আহত করা হয় সহ-সভাপতি তাইফুল হক তপুকে। এর জের ধরেই পরদিন ৩০ অক্টোবর নিহত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুন ও আরেক নেতা নাজিমের বাসায় ভাঙচুর চালায় প্রতিপক্ষ।

গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে অবরোধের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। এর জের ধরে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে চার দফা সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।

এরপর ৮ ডিসেম্বর জুনিয়র-সিনিয়রকে সালাম না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেলের আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত  হয়। এ ঘটনার জেরে ৯ ডিসেম্বর আবারও তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তদন্ত করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের চার জনের একটি দল। তাদের সামনেই নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের অনুসারী দুই নেতাকে মারধর করে সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা।

এরপর ১১ ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছয় নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় সংগঠন। বহিষ্কৃতরা সবাই চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারী। সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘটনায়ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়নি। এরপরেও বেশ কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তারা।

এ বছরের ৪ মে দুপুরে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ওই রাতে দ্বিতীয় দফায় কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় সংসদ।

 

 

/বিএল/জেএইচ/ আপ- /এসএসএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে