X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪৬ বছরেও শহীদের স্বীকৃতি পাননি এসএম নুরুল হুদা

বরিশাল প্রতিনিধি
১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:০৫আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:২৭

বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যাপক এসএম নুরুল হুদা

মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করায় পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বরিশাল বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম নুরুল হুদাকে। ১৯৭১ সালের ১৫ জুলাই নুরুল হুদাকে বরিশাল থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে হানাদাররা। কিন্তু ৪৬ বছরেও নুরুল হুদা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।

নুরুল হুদার ছেলে এসএম মাহবুব আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকেও বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

নুরুল হুদাকে নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক নিবন্ধ লেখেন তার ছেলে এসএম মাহবুব আলম। ‘আমার বাবা’ শীর্ষক ওই লেখায় এসএম মাহবুব আলম উল্লেখ করেন, আমার বাবা বরিশাল বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ইন্টারমিডিয়েট (মুসলিম) হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন।

এসএম নুরুল হুদা ১৯৩০ সালের ৩১ জুলাই শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানার ডামুড্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নাম মো. মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদার। নুরুল হুদা ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৮ সালে আইএ ও ১৯৫১ সালে স্নাতক পাস করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। ‘আমার বাবা’য় এসএম মাহবুব আলম দাবি করেন, ‘১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আমার বাবা জড়িত ছিলেন।’

এসএম নুরুল হুদার কর্মজীবন শুরু হয় শরীয়তপুরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে। নুরুল হুদা ১৯৫৭ সাল থেকে কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রথমে দিনাজপুর সুরেন্দ্র নাথ কলেজে শিক্ষকতার পরে বরিশাল বিএম কলেজে যোগদান করেন।

এসএম নুরুল হুদা দুই ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। বর্তমানে তার পরিবার বিএম কলেজের সামনের একটি বাসায় থাকেন।

এসএম মাহবুব আলম তার লেখায় উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালে অক্টোবর মাসে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে’ এমফিল করার জন্য আমার বাবা নুরুল হুদা লন্ডনে গিয়েছিলেন। একাত্তরের প্রথমার্ধ ছিল তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মধ্য পর্যায়। কিন্তু ঠিক ওইসময় দেশে শুরু হয় আন্দোলন। তখন (একাত্তরের প্রথমার্থ) তিনি উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিসর্জন দিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। ২৬ মার্চ থেকে মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। আত্মসচেতন সবাই এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। বিএম কলেজের ইউটিসি-ইউনিটের জন্য ব্যবহৃত ইন্টারমিডিয়েট হোস্টেলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। হোস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসাবে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গঠনে সহায়তা করে একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।

২৫ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী বরিশাল দখল করে। পরে হানাদাররা ওই হোস্টেলে একটি ক্যাম্প স্থাপন করতে চাইলে নুরুল হুদা কৌশলে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে, রাজাকার-আলবদররা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে জানায়, নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধাদের হোস্টেল ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। এতে নুরুল হুদার ব্যাপারে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন।

স্মৃতিচারণমূলক ওই লেখায় এসএম মাহবুব আলম উল্লেখ করেন, ‘১৫ জুলাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বেদনাবহুল দিন। ওইদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাবা বাসা থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ডাক্তার দেখিয়েই তিনি ফিরে আসবেন। তারপর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাবা আর ফিরে আসেননি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হলেও কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

দেশ স্বাধীনের পর বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিনুল ইসলাম আমাদের জানান, মেডিক্যাল কলেজের বিপরীত দিকে ওয়াপদায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বরিশালের সদর দফতর ও ক্যাম্প। একাত্তরের ১৬ জুলাই ওই ক্যাম্পে সেনাদের চিকিৎসার জন্য তাকে (আমিনুল ইসলাম) নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি আগের রাতে নিহত কয়েকটি লাশ দেখতে পান। এর মধ্যে তিনি আমার বাবা নুরুল হুদার লাশও দেখতে পেয়েছিলেন।

এসএম মাহবুব আলম আরও লিখেন, ‘বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এ ব্যাপারে ডা. আমিনুল ইসলাম আমাদের নিশ্চিত করেন। তবে তার মরদেহ কোথায় ফেলা হয়েছিল, তা আর জানতে পারিনি।’

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার এনায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, নুরুল হুদার লাশ পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা