X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে বাগেরহাটের বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৪আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৪৯

সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে বাগেরহাটের বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে বাগেরহাটে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো। এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। তাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনও দিবস আসলেই শুধু এই বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো ধুয়ে মুছে তাতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বাকি সময় অযত্নে ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে স্বাধীনতা অর্জনে আত্মত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানগুলো।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী বাগেরহাটের সবচেয়ে বড় গণহত্যাটি চালায় রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে। ওই বছরের ২১ মে পুরো ডাকরা গ্রামকে রাজাকাররা বধ্যভূমি করে তুলেছিল। গুলি করে ও গলা কেটে তারা সেদিন দুই শতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এছাড়া কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি, বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলো ঘাট ও সদর উপজেলার কান্দাপাড়ায় নিরস্ত্র বাঙালিদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করে রাজাকাররা। স্বাধীনতার পর এসব স্থান শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসন বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে বাগেরহাটের বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো

এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত ডাকবাংলোটি বধ্যভূমি হিসেবে চি‎হ্নিত করে একটি ফলক উন্মোচন করা হয়। কিন্তু ওই ফলক উন্মোচনের ২০ বছর পার হলেও সেই জায়গাটি উন্মুক্ত পড়ে আছে। যা আজও সংরক্ষণ করা হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা সরদার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সেদিন বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাগেরহাটের অসংখ্য মানুষ রাজাকারদের হাতে খুন হন। তাদের আত্মত্যাগের জন্য আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সরকার বধ্যভূমিগুলো চি‎হ্নিত করে সেখানে স্তম্ভ নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেইসব স্থানগুলো বলতে গেলে সারা বছরই পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।’ সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে বাগেরহাটের বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরে ডাকবাংলোর বধ্যভূমিটি অন্যতম কসাইখানা হিসেবে পরিচিত। রাজাকাররা এখানে অসংখ্য মানুষকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে তাদের লাশ ভৈরব নদে ভাসিয়ে দেয়। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় প্রশাসন এখানে একটি ভিত্তিফলক উন্মোচন করে। কিন্তু ওই ফলক উন্মোচনের ২০ বছর পার হলেও সেই জায়গাটি এখনও উন্মুক্ত পড়ে আছে। যা আজও সংরক্ষণ করা হয়নি।’ আগামী প্রজন্মের তরুণদের জন্য এই স্থানে অবিলম্বে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানান ওই নেতা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাগেরহাট জেলা কমান্ডার শাহীনুল আলম ছানা বলেন, ‘১৯৭১ সালে রাজাকাররা বাগেরহাটে অন্তত ৭০০ মানুষকে হত্যা করে। বাগেরহাটের প্রায় সব বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকে। কোনও দিবস আসলেই সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তাই এই স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় সীমানা প্রাচীর দিয়ে তা সংরক্ষিত করা এবং শহরের ডাক বাংলোর বধ্যভূমিটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে তা সংরক্ষণের দাবি জানাই।’ সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে বাগেরহাটের বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বাগেরহাটে শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো সংরক্ষিতই রয়েছে। সরকার এই বধ্যভূমিগুলো রক্ষার জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে। এগুলোকে আরও ভালোভাবে রাখতে প্রশাসন উদ্যোগ নেবে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে বাগেরহাটের কেন্দ্রীয় বধ্যভূমি হিসেবে চি‎হ্নিত ডাকবাংলোকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে শিগগির কাজ শুরু করা হবে।’

এছাড়া জেলার সবগুলো বধ্যভূমি সারাবছর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের পাশাপাশি সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ