X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৪০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৪

সুনামগঞ্জে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বোরোর বীজতলা তলিয়ে গেছে গ্রীষ্মে আগাম বৃষ্টি, বর্ষায় বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলে আমনের ক্ষেত ভেসে গেছে। পানি নামার পর বোরো চাষ করার স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ফের কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পানি উঠেছে হাওরের নিচু জমিতে। এ পানিতে ডুবে গেছে বোরোর বীজতলা। তাই সময়মতো বোরোর আবাদ নিয়েও শঙ্কায় আছেন চাষিরা। পাহাড়ি ঢল ও দুই দফা বন্যার পর এবার হেমন্তের বৃষ্টির ধকল কাটিয়ে আবার কবে ফসল উঠবে ঘরে সেই চিন্তায় মাথায় হাত উঠেছে কৃষকদের।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, জেলার অন্যতম শস্য উৎপাদন ক্ষেত্র খরচার হাওর ও শনির হাওরের পানি ধীর গতিতে কমছে। তাই অধিকাংশ জমিতে পানি জমে আছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বীজতলায় পানি লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নদীতে পানি বেশি থাকায় হাওরের পানিও দেরিতে কমছে। তাই বোরো আবাদ পিছিয়ে যাবে। বোরো আবাদ পিছিয়ে গেলে আবারও ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা।

ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ইউনিয়নের ৬০ ভাগ বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীজতলার ২০ ভাগ পুরো নষ্ট হয়েছে। এর ফলে প্রায় দুই হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হাওরের পানি দেরিতে নামায় কৃষক এখনও পুরোদমে বোরোর আবাদ শুরু করতে পারছেন না।’ ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতে বাঁধের কাজ শেষ করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজিনপুর গ্রামের কৃষক জলিল মিয়া জানান, গত বছর এমন সময় হাওর পরিষ্কার করে জমিতে ধান রোপণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার জমির পানিই নামছে না। এখন পানি কমার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

চান্দারগাঁও গ্রামের মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বোরো ক্ষেত এখন ভাগ্যনির্ভর হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো থাকলে ফসল তোলা যাবে, না হলে নাই।’

ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানকুনিয়া হাওরের তীরবর্তী গ্রাম ইসলামপুরের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ‘হাওর এলাকায় মাছ ধরা আর কৃষিকাজ ছাড়া বিকল্প কোনও কাজের সুযোগ নাই। বোরো ফসল হয়ে গেছে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে ফসল কেটে ঘরে তোলা যায়। না হলে পানিতে ভেসে যায় বা শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়।’ হাওর এলাকার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দাবিও জানান তিনি।    সুনামগঞ্জে বোরোর বীজতলায় পানি

মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘হাওর এলাকায় কৃষকরা এখন আর্থিক সংকটে রয়েছেন। গত বার বন্যায় ফসলহানির পর তাদের হাতে পুঁজি বলতে কিছু নেই। বোরো মওসুমে জমিতে ধান রোপণ, হাল দেওয়া, সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ কিনতে নগদ টাকা লাগে। তাই কৃষকরা চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন।’ সরকার থেকে যে পরিমাণ বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সাগরে জোয়ারের প্রভাবে মেঘনা নদীর মোহনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ব্ছর ডিসেম্বর মাসে সুরমা নদীর পানি যে স্তরে ছিল, এবছর তার থেকে দেড় ফুট পানি বেশি রয়েছে। নদীর পানিও ধীর গতিতে নামছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ‘সময় মতো হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও চাষাবাদ কমপক্ষে ১০ দিন পিছিয়ে যাবে। বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।’  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, ‘কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে বোরো জমি চাষাবাদে কিছুটা বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বীজতলা তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী মাসেই ধান রোপণের কাজ শুরু হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার  ৭২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বার বোরো আবাদ হয়েছিল দুই লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবছর ছয় হাজার ৯০৫ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আট লাখ ৯৩ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। এজন্য ১২ হাজার হেক্টর বীজতলায় বোরো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এ মাসের শেষার্ধে পুরোদমে বোরো আবাদ শুরু হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, অগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বীজধান বিতরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ‘ইবারও ধান পানিয়েই খাইবো’

 

/এএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা