ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী ও গাড়ির যাত্রীদের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এসব সড়কে দিয়ে যাতায়াতের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এজন্য রিকশা-অটোরিকশা বা বাসে স্থির হয়ে বসে থাকা যায় না। ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। খানাখন্দের কারণে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর শুকনো মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি ওড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের প্রায় ৩০টি স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই মহাসড়কের লাউদিয়া, তেতুলতলা বাজার, বিষয়খালী এলাকা, কয়ারগাছি, বেজপাড়া, বাকুলিয়া, কালীগঞ্জের কলেজ মোড়, ব্র্যাক অফিসের সামনে, বৈশাখী পেট্রোল পাম্প এলাকা, মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনের এলাকা, ফুলবাড়ি, শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার, মদনডাঙ্গা বাজার, চড়িয়ারবিল বাজার, গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ভাইট বাজার, শহরের আরাপপুর, তাসলিমা ক্লিনিকের সামনের এলাকায় বিটুমিন আর পাথর উঠে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছর ধরে এ সড়ক মেরামত করা হয়নি। এ কারণে সড়কে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের লাউদিয়ায় গর্ত এড়িয়ে চলতে গিয়ে একটি বাস খাদে পড়ে নিহত হন ওই বাসের হেলপার আজাদ, আহত হন আরও ৩ জন। এছাড়া প্রায়ই এসব গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল হয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, গত মাসে সদর উপজেলার তেতুলতলায় মহাসড়কে একটি ট্রাক বিকল হয়ে যায়। এতে প্রায় ৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় রাস্তা থেকে ট্রাকটি সরানো হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কয়েক জন বাসচালক জানান, কিছু দিন আগে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাড়সড়কের পাঁচ মাইল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দুই জন কর্মকর্তা। এছাড়া ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জেলা প্রধান পাট পরিদর্শক।
বাসচালকরা আরও জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র উপায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে এ মহাসড়ক দিয়েই উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবাহন চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, ফরিদপুরসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল করে। কিন্তু এ সড়ক যেখানে-সেখানে ভাঙা থাকার কারণে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে, পাশাপাশি ভোগান্তির সীমা থাকে না। মাঝে মধ্যে ইট-বালি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হয়, কিন্তু সপ্তাহ না পেরুতে সেই ইট-বালি সরে যায়।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রামের মোটরসাইকেল চালক জহির উদ্দিন বলেন, ‘শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার থেকে ঝিনাইদহ শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা। এ সড়কে চলাচল করাটা অনেক কষ্টকর। জেলা শহরে আসতে ভাঙা সড়কে ঝাঁকুনিতেই অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী নন্দ দুলাল সাহা বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমাকে ঝিনাইদহ শহরে আসতে হয়। যাতাযাতের সময় দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কালীগঞ্জে সড়কের ১৫ কিলোমিটার অংশ চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে।
বাসচালক রবিউল আলম জানান, সড়কের বেহাল দশার কারণে ৫ মিনিটের পথ যেতে ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে। মাঝে মধ্যে গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। কখনও কখনও যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকতে হয় গাড়ি নিয়ে।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু বলেন, ‘সমিতির অধীনে প্রায় তিন হাজার গাড়ি রয়েছে। মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে মালিকদের ডেমারেজ বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবহণ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।’
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় সব জায়গায় ক্রোকোডাইল ক্রাক (কুমিরের গায়ের মতো ভাঙা) রয়েছে। প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটি মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য তা স্থায়ী হয় না। এই সড়ক কাজের জন্য দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’
