X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৬ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় মেলেনি ঠাঁই

আনিসুর রহমান স্বপন, বরিশাল
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:২৭আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৩৪

বিভা রাণী ও তার ছেলে সাগর (ছবি- প্রতিনিধি)

‘অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর আমি নিজের মান দিয়া দেশ স্বাধীন করছি। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা সম্মান পেয়েছেন। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে আমার মতো নির্যাতিত হওয়া অনেক নারীও সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু আমি পাই না কেন? আমার মানের স্বীকৃতি চাই।’

সম্প্রতি চরম অভিমান নিয়ে এ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলেছেন একাত্তরে রাজাকারদের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া বিভা রাণী। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এ নারী জানান, অনেক দৌঁড়-ঝাঁপ করেছেন, কিন্তু ৪৬ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার ঠাঁই মেলেনি।

একাত্তরে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিবরণ দিয়ে বিভা রাণী জানান, যুদ্ধের পর তার জীবনে আরও বিপর্যয় নেমে আসে। তাকে ছেড়ে ভারতে চলে যান তার স্বামী অনুকুল মজুমদার। এতে একমাত্র ও প্রতিবন্ধী সন্তান সাগরকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন তিনি। শেষমেশ ঠাঁই হয় একমাত্র ভাই উপেন্দ্র নাথ মণ্ডলের সংসারে। বেঁচে থাকার তাগিদে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। ধাত্রীর কাজও করেন প্রস্তাব পেলে। ভাই উপেন্দ্র নাথ মণ্ডল মারা যাওয়ার পর অভাব-অনটন আরও ঝেঁকে ধরে তাকে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে বিভা রাণী জানান, তার বাবা টরকীরচরে ব্যবসা করতেন। মা আগেই মারা গিয়েছিলেন। একমাত্র ভাই ছাড়াও তার আরও তিন বোন ছিল। ১৯৭১ সালে তিনি টরকী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। তিনি বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসে টরকীরচরে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে আসে রাজাকাররা। তারা এখানে এসেই চারিদিকে আগুন দিতে শুরু করে। লোকজন যে যেদিকে পারে পালায়। আমার বাবা তখন পর্যন্ত টরকীরচরের বাড়িতে ছিলেন।’

বিভা রাণী আরও বলেন, ‘ওই সময় সবাই আমার বাবাকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে পরামর্শ দেন। একদিন বাবা আমাদের নিয়ে পাশের কালকিনির রমজানপুরের দিকে ছুটতে থাকেন। ওই সময় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাই।’

কান্নায় ধরে আসা গলায় তিনি বলেন, ‘রাজাকারদের হাতে আমি ধরা পরে যাই। সেদিন তাদের পাশবিক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাইনি। ওই সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরবর্তী সময়ে আমাকে বাবা খুঁজে বের করে কালকিনির রমজানপুরের বাসায় নিয়ে আসেন।’

ফের নিজের বিয়ের প্রসঙ্গে ফিরে যান বিভা রাণী। বলেন, ‘শ্রাবণ মাসে একই গ্রামের অনুকুল মজুমদারের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। পরে আমরা দুই পরিবারের ১০ জন সদস্য মিলে টরকী থেকে নৌকাযোগে আট দিন পর ভারতে গিয়ে পৌঁছি। দেশ স্বাধীনের পর সবাই আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসার পর একদিন যুদ্ধচলাকালীন সময়ে আমার ওপর হওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা জানতে পারেন আমার স্বামী। এরপরই তিনি আমাকে নিয়ে সংসার করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে সাগর জন্ম নেয়।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভা রাণী বলেন, ‘যুদ্ধের সময়ে সম্ভ্রম হারানোর কারণে সংসার ভেঙে গেছে। আজও সরকারিভাবে আমি কোনও সহযোগিতা পাইনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নামও পর্যন্ত তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অথচ আমার জীবনের করুণ কাহিনী স্থানীয় সব মুক্তিযোদ্ধারা জানেন!’

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার এনায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, তারা বিভা রাণীর সব কথাই জানেন। তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগও তারা নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘বিভা রাণীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা