X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মর্টারশেলের ভয় উপেক্ষা করে নওগাঁকে মুক্ত করেন যোদ্ধারা

আব্দুর রউফ পাভেল, নওগাঁ
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:১৬আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:১৮

মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ (ছবি- প্রতিনিধি)

১৬ ডিসেম্বর বিজয়োল্লাসে উত্তাল হয় দেশ। এ খবর পেয়ে ওই দিনই মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পণ করেন, যে করেই হোক নওগাঁকে হানাদার মুক্ত করতে হবে। পরিকল্পনা মতো পরের দিন ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পৌঁছে যায় শত্রুশিবিরে। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে শত্রুদের উপর্যুপরি মর্টারশেল নিক্ষেপ। জীবনের মায়া মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটাতে পারেনি। মর্টারশেলের ভয় উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যেতে থাকেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। রাতভর যুদ্ধের পর হার মানে হানাদাররা।

নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে। ১৮ ডিসেম্বর জেলা শহর হানাদার মুক্ত হলেও সেখানে যুদ্ধটা চলেছে অনেক দিন ধরে।
মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের খবর জানার পর নওগাঁয় যুদ্ধকালীন কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী শহর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিসেনারা শহরে প্রবেশের চেষ্টা চালান। মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্থানি সেনারা মর্টারশেল ছুড়তে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে যতই অগ্রসর হচ্ছিলেন, পাকিস্থানি সেনাদের মর্টারশেল নিক্ষেপ ততই বাড়ছিল।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, জালাল হোসেন চৌধুরীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণে যান। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এতে শহীদ হন ছয় জন মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৮ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর করার কিছুই ছিল না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা শহরের সরকারি কে ডি উচ্চবিদ্যালয়, পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তার দুই পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, এ দিন জেলার বিহারি সম্প্রদায় নিজেদের পরিবার নিয়ে সরকারি কে ডি উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতান কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি ডি.এম আব্দুল বারী বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর যখন সারাদেশে বিজয়ের পতকা ওড়ছিল, তখন আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। ১৮ ডিসেম্বর আমরা মুক্ত হই। তাই এই দিনটিতে একুশে পরিষদের পক্ষ থেকে হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে থাকি।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড হারুন-অল-রশিদ বলেন, ‘বিজয়ের দুই দিন পর আমরা মুক্ত হই। মাঝের দুই দিন আমাদের জন্য ছিল ভয়াবহ।’
তিনি আরও জানান, যাদের ত্যাগে আজ দেশ স্বাধীন, তাদের অনেকেই এখন অসহায়, অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা কাগজ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও তালিকায় তাদের নাম নেই।

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা