রংপুর অঞ্চলে প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে গত চার দিনে পাঁচ নারীর মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিহতদের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
এছাড়া একই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ৫০ জন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নিহতরা হলেন- লালমনিরহাট জেলার সদর থানার সাম্মি আখতার (২৭) একই জেলার পাটগ্রামের ফাতেমা বেগম (৩২) ও আলো বেগম (২২) । অপর দুই জন হলেন- রংপুরের কাউনিয়ার গোলাপি বেগম (৩০) এবং নীলফামারীর রেহেনা বেগম (২৫) ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে গত কয়েক দিনে শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা প্রতিদিনই কমছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। শীতের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। তারা শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করতে গিয়েই এই দুর্ঘটনায় পড়েছে। আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতায় দগ্ধ হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। ফলে শীত নিবারণ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে হতদরিদ্র নারী ও শিশুদের।
মঙ্গলবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী, তবে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। বার্ন ইউনিটে বিছানায় জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় রাখা হয়েছে অনেক রোগীকে। সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জের আসমা বেগম। তিনি জানান, শীতের কবল থেকে বাঁচতে ধানের খড় দিয়ে আগুন তাপাতে গিয়ে অসাবধানতায় শাড়ির পেছনে আগুন লেগে যায়। এতে করে তার কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত ঝলসে যায়।
একই কথা জানিয়েছেন রংপুরের পানবাজার এলাকার মমতাজ বেগম, লালমনিরহাটের আদিতমারীর মনোয়ারা বেগমসহ অনেকেই ।
দগ্ধ শিশু তাসনিমের (৫) মা জমিলা বেগম জানান, চাদর গায়ে মুড়িয়ে দিয়ে আগুন পোহানোর সময় চাদরের এক কোনায় আগুন লেগে দগ্ধ হয়েছে তার মেয়ে।
এদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতায় এতগুলো নারীর দগ্ধ হওয়ার ঘটনা আগে কখনও শুনিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ার্ডে মোট বেড সংখ্যা ২৬টি অথচ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দগ্ধ রোগীদের বেশিরভাগের শরীরের নিচের অংশে ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’