X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে কাঁপছে গাইবান্ধা

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৫আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৯

আগুন পোহাচ্ছেন গ্রামের নারী ও শিশুরা পৌষের শেষের শীতেই কেঁপে গেছে দেশ। মাঘ মাস সবে শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমানতালে বাড়ছে শীত। মানবেতর জীবনযাপন করছে উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষ। ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষা গাইবান্ধার চরাঞ্চলের অবস্থা আরও করুণ। বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। রোদ স্বল্পতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের ক্ষেত। সব মিলে জনজীবনের স্থবিরতায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।    

স্থানীয়রা জানান, রাতভর শিশির পড়ছে। ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ দেখা যাচ্ছে না। ফলে মাঘের এই হাড় কাঁপানো তীব্র ঠাণ্ডা কাহিল করে ফেলেছে গাইবান্ধাবাসীকে। শুধু মানুষ নয়, প্রাণীকুলও কাঁপছে। তবে শীতের দাপটে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কাতর হয়ে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলসহ সাত উপজেলার হতদরিদ্র-ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষরা। গরম কাপড়ের অভাবে এসব মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সাময়িকভাবে শীত নিবারণে খড়কুটোর আগুনই যেন তাদের একমাত্র ভরসা। তবে রাতের বেলায় বৃষ্টির মতো পড়তে থাকা কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে তাদের কষ্ট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ।

দুপুরের গাইবান্ধা রবিবার (১৪ জানুয়ারি) গাইবান্ধায় দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তা ছিল একেবারে নিরুত্তাপ। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় কাঁপতে দেখা গেছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকেও। কুয়াশা আর ঠাণ্ডার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। সন্ধ্যার পর পরেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে রাত ৮টার পরেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরসহ গ্রামাঞ্চচলের হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট। ঘন কুয়াশার কারণে গতি কম থাকায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাওয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাগুলোতেও নেই মানুষের সরব উপস্থিতি।

এছাড়া শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোয় ভিড় করছে অনেক মানুষ। এসব রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন আব্দুস শুকুর বলেন, ‘শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু ছাড়া আর কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’

লেট ব্রাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আলুর ক্ষেত এদিকে ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডার কারণে বিরুপ প্রভাব পড়েছে কৃষিক্ষেত্রে। এরই মধ্যে লেট ব্রাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আলুর ক্ষেত। বোরো ধানের বীজতলার চারাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। এছাড়া সিম, কপিসহ বিভিন্ন শীতকালীন শাকসবজির ক্ষেতে রোগবালাইয়ের পাশাপাশি পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। জমিতে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির শষ্কায় পড়েছেন জেলার সাত উপজেলার কৃষকরা।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ ক ম রুহুল আমীন জানান, শীতের প্রকোপ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৭০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরিভাবে আরো ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে। 

তবে স্থানীয়রা জানান, সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই তীব্র শীতে কষ্ট আর দুর্ভোগে থাকা চরাঞ্চলসহ জেলার প্রায় ৫ লাখ হতদরিদ্র মানুষ এখনও কোনও শীতবস্ত্র পাননি। সরকারি-বেসরকারি ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে তাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই। এ কারণে জেলার তাপমাত্রা কত তা জানা সম্ভব নয়। তবে জেলার তাপমাত্রা যদি রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রার মতিই আরও কমতে থাকে তাহলে ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি অবস্থা হবে বলেই মনে করছেন গাইবান্ধার মানুষেরা।

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
পহেলা বৈশাখের নির্দেশনা উপেক্ষা উদীচীর: যা বলছে ডিএমপি
পহেলা বৈশাখের নির্দেশনা উপেক্ষা উদীচীর: যা বলছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি