X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালের চোখ তাহলে উপড়ালো কারা?

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৪আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৫১

শাহজালাল (ছবি: খুলনা প্রতিনিধি)

গত বছরের ১৮ জুলাই রাতে দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয় খুলনার শাহজালালের। দুই চোখ হারানো এই যুবকের দাবি, দেড় লাখ টাকা না পেয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে খুলনার খালিশপুর থানা পুলিশ তার চোখ তুলে ফেলেছে। তবে পুলিশের দাবি, ছিনতাইকালে জনতার পিটুনিতে চোখ হারিয়েছেন শাহজালাল। প্রায় চার মাস তদন্ত শেষে পিবিআই তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শাহজালালের চোখ কে উপড়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওই ঘটনায় দায়ের মামলায় ওসিসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদেরও নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনের পর  শাহজালালের বাবার প্রশ্ন, তাহলে কে তার ছেলের চোখ উপড়ালো?

শাহজালালের চোখ উপড়ানোর ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত সোমবার মহানগর আমলি আদালত ‘গ’ অঞ্চলে জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে শাহজালালের মায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানসহ সব আসামিকে নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনকে দায়সারা ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন শাহজালালের বাবা মো. জাকির হোসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশের হেফাজতে শাহজালালের চোখ তোলা হয়। যা তার ছেলের সাক্ষ্যতে প্রমাণ হয়েছে। সেই পুলিশকেই যদি নির্দোষ বানানো হয়, তাহলে শাহজালালের চোখ উপড়ালো কারা। এতদিন ধরে পিবিআই কী তদন্ত করল? জড়িতদের শনাক্ত করাই তো ছিল পিবিআইর তদন্তের উদ্দেশ্য।’

১১৪ দিন তদন্ত করে পিবিআই খুলনার পরিদর্শক মো. বাবলুর রহমান খান প্রতিবেদনটি জমা দেন। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) তা আদালতে নথিভুক্ত হয়। ৫ জানুয়ারি পিবিআই খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিছুর রহমান প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। পিবিআই গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম এ প্রতিবেদনকে মনগড়া উল্লেখ করে বলেন, ‘বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি। মামলার পরবর্তী তারিখে আমি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করবো।’

তদন্ত প্রতিবেদনের ১৫ নম্বর কলামের মতামত অংশে পিবিআই খুলনার পরিদর্শক মো. বাবলুর রহমান খান উল্লেখ করেন, তদন্তকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, খসড়া মানচিত্র, সূচিপত্র ও ঘটনাস্থলের ছবি উত্তোলন, থানার জিডি, সিসি, হাজতি রেজিস্ট্রার, আসামির চালান কপি, কোর্ট হাজতির রেজিস্ট্রার ও জেলখানার আসামি রেজিস্ট্রার এবং খালিশপুর থানা ও খালিশপুর ক্লিনিকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেছেন। এছাড়া, বাদী ও ভিকটিমসহ ৮ জন, নিরপেক্ষ ২৫ জন এবং ১৮ জুলাই খালিশপুর থানা হাজতে থাকা দু’জনসহ মোট ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন।

সার্বিক তদন্ত এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা পর্যবেক্ষণ করে তিনি মতামতে লিখেছেন, ‘মামলার প্রধান আসামি খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসিম খানের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের সংশ্লিষ্ট ধারাসহ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’র ১৩/১৫ ধারার অভিযোগের পক্ষে কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। একইভাবে আসামি এএসআই  রাসেল, এসআই তাপস কুমার পাল, এসআই মো. মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মো. মিজানুর রহমান, কনস্টেবল আল মামুন, আনসার সিপাহি মো. আফসার আলী, ল্যান্স নায়েক আবুল হাসেম, আনসার নায়েক রেজাউল হক, এসআই মো. নূর ইসলাম এসআই সৈয়দ সাহেব আলী, সুমা আক্তার এবং মো. রাসেলের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভিকটিম শাহজালাল ওরফে শাহ জামাল ওরফে শাহ গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালী বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকালে হাতেনাতে ধরা পড়ে বিক্ষুব্ধ জনগণের হাতে গণপিটুনির শিকার হয়। এতে তার দুই চোখ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তার চোখ দুটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। যা পেনাল কোডের ১৪৩/৩২৩/৩২৬ ধারার অপরাধ। তদন্তকালে এ নৃশংস ঘটনায় কে বা কারা জড়িত ছিল তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’

আদালতে দাখিল শাহজালালের মায়ের এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই শাহজালাল নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুরবাড়ি থেকে রাত ৮টায় মেয়ের জন্য দুধ কিনতে বাসার পাশের দোকানে যায়। এ সময় খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। এ টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যান। পরদিন ১৯ জুলাই খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার দুই চোখ উপড়ানো অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় শাহজালাল জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গাড়িতে করে গোয়ালখালী হয়ে বিশ্বরোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় শাহজালালের মা রেনু বেগম বাদী হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে মামলা করেন। এতে খালিশপুর থানার ১১ পুলিশ ও আনসারসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন: অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু


/জেবি/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা