X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন সুমন?

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:০৪আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৯:৫১

 

সুমন ও তার স্ত্রী

কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কের গোলদিঘীর পাড় এলাকায় একটি বাড়ি থেকে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উদ্ধার হয়েছে দুই শিশুসহ স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ। একই পরিবারের চারজনের এমন মৃত্যুর ঘটনায় মর্মাহত ও বিস্মিত এলাকার লোকজন ও স্বজনরা। পুলিশ বা পরিচিত কেউই তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। গতকাল বুধবার দুপুরেও পরিবারের সবাইকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেখা গেছে বলে জানান স্বজন ও স্থানীয়রা। তবে তারা ধারণা করছেন, সচ্ছল অবস্থা থেকে সম্প্রতি অর্থকষ্টে পড়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারে সুমন চৌধুরী।

সদর মডেল থানার ওসি রঞ্জিত বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। গিয়ে দেখা যায় ভেতর থেকে ঘরের দরজা আটকানো। আমরা লোক এনে দরজা ভেঙে ভেতরে যাই। গিয়ে দেখা যায় নিচতলায় একটি ঘরে খাটের ওপর মা ও দুই সন্তানের লাশ পড়ে আছে। দোতলার একটি ঘরে গলায় রশি দেওয়া সুমন চৌধুরীর লাশ ঝুলতে দেখা যায়।’

সুরতহাল প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, দুই শিশুর দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। তবে সুমনের স্ত্রী বেবীর গলায় সামান্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সুমনের গলায় রশির দাগ ছাড়া শরীরে আর কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।

ওসি জানান, পুলিশ ধারণা করছে চেতনানাশক দিয়ে দুই শিশুকে অজ্ঞান করার পর তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

চার লাশ উদ্ধারের এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি অপমৃত্যুর ও আরেকটি হত্যা মামলা। পুলিশ বাদী হয়ে এই দুই মামলা দায়ের করেছে এবং দুটি মামলারই তদন্ত চলছে। 

এদিকে সরেজমিন আজ  বৃহস্পতিবার সকালে শহরের গোলদিঘীর পাড়ে নিহত সুমন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সুমনের বাসার সামনে মা বসুমতি চৌধুরী বিলাপ করে কাঁদছেন। পাশে এলোমেলো অবস্থায় বসে আছেন সুমনের ভাইসহ অন্য স্বজনরা।

সুমনের মেজ ভাই অমির চৌধুরী বলেন,‘আমার ভাই এমনিতে খুব অভিমানী ছিল। না খেয়ে থাকলেও কোনোদিন কাউকে বুঝতে দিতো না। সে অভিমান নিয়েই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। তার পরিবারে অভাব ছিল, কিন্তু কোনোদিন বাইরে থেকে বোঝার সুযোগ ছিল না।’

অমির চৌধুরী বলেন, 'ওইদিন (বুধবার) দুপুরে বাসার বাইরে এসে সুমন তার ছোট মেয়ে জ্যোতিকে ভাত খাওয়াচ্ছিল। তখন আমি তাকে বলি, বাচ্চাদের বাইরে বসিয়ে খাওয়ালো ভালো না। এরপর সুমন বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। এসময় পরিবারের সবাইকে খুব স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছিল।’

এ বাড়িতে সন্তান ও স্ত্রীসহ সুমনের মৃতদেহ পাওয়া যায়

নিহত সুমনের বড় ভাই সমির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই এক বোন। এর মধ্যে সুমন হচ্ছে মেজ। কিন্তু সে ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। হঠাৎ কেন এমন হলো জানি না।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'শহরের গোলদিঘীর পাড়ে আমার মায়ের নামে সুমনের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল। দুই বছর আগে সেটি সাবলেট দিয়ে দেয় স্থানীয় সঞ্জয় দাশকে। সাবলেটের ওই টাকা দিয়েই সংসার চলতো সুমনের। অভাব ছিল। শুনেছি একারণে তার কিছু ধারকর্জও হয়। সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় চাপে ছিল সুমন। এখন তো দুনিয়া ছেড়েই চলে গেছে। কারা তার কাছে টাকা পেতো আমরা তাও জানি না।’

স্থানীয় দুলাল দাশ ওরফে বাবুল বলেন,'তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কোনোদিন মনোমালিন্য দেখিনি। সব সময় পরিবারের সবার মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। কোনোদিন ঝগড়া বা উঁচু স্বরে কথা বলতে শুনিনি।’

ঈদগাঁও ইসলামাবাদ এলাকা থেকে আসা সিপ্রা দে নামে সুমনের এক স্বজন বলেন, 'বুধবার দুপুর ২টার দিকে মোবাইল ফোনে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে সুমনের। তার শ্যালিকা ডুলাহাজারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এ বিষয়ে সুমন খোঁজখবর নিচ্ছিল। এসময় তাকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তার স্ত্রী বেবীকেও স্বাভাবিক দেখেছি।’

সন্তান ও স্ত্রীসহ মৃত সুমনের স্বজন ও প্রতিবেশিরা

ওসি রঞ্জিত বড়ুয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এরপরও অধিকতর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার কক্সবাজার সদরের গোলদিঘীর পাড় এলাকায় নিজের বাসা থেকে গৃহকর্তা সুমন চৌধুরী (৩৫) তার স্ত্রী বেবী চৌধুরী (৩০) এবং দুই সন্তান অবন্তিকা চৌধুরী (১১)ও জ্যোতি চৌধুরীর (১৩) লাশ উদ্ধার করা হয়।

স্বজনরা জানান,  দুপুর থেকে ওই বাড়িতে কোনও মানুষের সাড়া না পেয়ে স্থানীয়দের মনে সন্দেহ জাগে। এরপর সেখানে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। সারাদিন দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখে কৌতূহল জাগে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে একই পরিবারের ৪ জনের লাশ উদ্ধার 

/এফএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা