রাজধানী ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার ‘রুবি ভিলা’ ভবনের ৫ম তলার জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযানে নিহত তিন জঙ্গির একজন হলো মো. রবিন হাসান (১৭)। ৭ জানুয়ারি নিজেদের দোকানের ক্যাশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় রবিন। এরপর থেকে তাকে খুঁজে না পেয়ে ২০ জানুয়ারি দুপুরে নকলা থানায় একটি জিডি করেন তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফা। নকলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে নিহত ‘জঙ্গি’ রবিন সম্পর্কে তার স্বজনদের কাছে জানা যায়, রবিন শেরপুর জেলার নকলা পৌর এলাকার কুর্শাবাদাগৈড় গ্রামের মৃত ফজর উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রবিন ছোট। সে স্থানীয় নকলা শাহরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা ফজর আলীর মৃত্যুর পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দিলে ২০১৩ সালে বড় ভাই গোলাম মোস্তফার সঙ্গে চালের ব্যবসায় যুক্ত হয় রবিন। গত ৭ জানুয়ারি তাকে শেষবারের মতো দেখা গেছে এলাকায়। এরপর থেকেই সে লাপাত্তা। নাখালপাড়ায় র্যাবের অভিযানে তার নিহত হওয়ার খবর রবিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিস্ময় প্রকাশ করেছে লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, রবিন সহজ সরল টাইপের ছেলে ছিল। সে কিভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়লো তা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে লোকজন কিছু জানতো না। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে নিহত জঙ্গির একজনকে রবিন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে তার পরিবারের সদস্যরা। পরে নকলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকীর পরামর্শে তারা র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগে যোগাযোগ করে রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা। রবিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রবিনের লাশ শনাক্ত করেন রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা।
এ ব্যাপারে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি ও আমার বোন জামাই মো. আলামীন মর্গে গিয়ে রবিনের লাশ শনাক্ত করেছি। এ ব্যাপারে র্যাবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। লাশ গ্রহণের বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব।’ জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রবিনের মা মালেকা বেগম বলেন, ‘ভেবেছিলাম ছেলে ইজতেমায় গিয়েছে। ফিরে আসবে, এমন আশায় বুক বেঁধেছিলাম। আর রবিনের মেজো ভাই হাফেজ রফিকুল ইসলামের দাবি, বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক।
প্রতিবেশীরা জানান, কাউকে কিছু না বলেই উধাও হয় রবিন। নকলা পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুল আউয়াল সেলিম বলেন, সহজ ও সরল প্রকৃতির এমন ছেলের জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া সত্যিই হতাশাজনক ঘটনা।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে মেজবাহ নামে একজনের পরিচয় আগেই পাওয়া গেছে। অন্য দু’জনের পরিচয় জানতে ১৮ জানুয়ারি তাদের ছবি প্রকাশ করে র্যাব। সেই ছবির সূত্র ধরে বাকি দুই জনকেও শনাক্ত করা হয়। অপর দু’জন হচ্ছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের বাদুয়ারা গ্রামের মেজবাহ উদ্দিন। অন্যজন চট্টগ্রাম মহানগরীর চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট সংলগ্ন ইউনূস বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার নাফিস উল ইসলাম।
আরও পড়ুন:
'জঙ্গি' নাফিসের লাশ নেবেন না বাবা
নাখালপাড়ায় নিহত আরেক ‘জঙ্গি’র পরিচয় মিলেছে