‘অপহৃত ও খুন হওয়া’র ৯ বছর পর বাড়ি ফিরেছেন জালাল উদ্দিন। কিন্তু মামলার আসামি ও তাদের পরিবার হয়েছে সর্বস্বান্ত। ২০০৯ সালের ১০ জুলাই ‘নিখোঁজ হওয়া’ জালাল উদ্দিন ১৬ জানুয়ারি ফিরে এসেছেন। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
ফিরে আসার পর জালাল উদ্দিন ১৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির হন। তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে জানানো হয়, আসামিরা নেশাযুক্ত ওষুধ সেবন করানোর কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। দীর্ঘদিন পর কিছুটা স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। ১৮ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুর রহমান মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে হোসেনপুর থানার ওসিকে মামলাটি পুনরায় তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হোসেনপুর থানার ওসি আবুল হোসেন জানান, এখনও আদালতের কোনও কাগজপত্র তিনি পাননি।
মামলার আসামি হয়ে অমানবিক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে এর বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জালাল উদ্দিন হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর লাকুহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, তিনি ২০০৯ সালের ১০ জুলাই নিখোঁজ হন। পরে তাকে খুন ও লাশ গুমের অভিযোগে স্ত্রী ললিতা বেগম ২০১০ সালের ৩১ মার্চ হোসেনপুর থানায় পাঁচ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় গাঙ্গাটিয়া গ্রামের শংকর সূত্রধর, মো. আসাদ মল্লিক, রুহুল আমিন উরফে রঙ্গু, হিরা মিয়া ও আজহারুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলাতে বলা হয়, সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে আসামিরা তার স্বামীর কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু জালাল উদ্দিনকে বিদেশে না পাঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে অপহরণ করা হয়। এরপর আর জালালের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জালালের ফিরে আসা প্রসঙ্গে স্ত্রী ললিতা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমার স্বামী ফিরে এসেছে। কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন, কিভাবে ছিলেন; কিছুই তার মনে পড়ছে না। শুধু বলছেন— কত জায়গায় গিয়েছি, অনেকের কাছ থেকে চেয়ে খাবার খেয়েছি। এভাবেই দীর্ঘ ৯টি বছর বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঘুরেছেন, কিন্তু এখন তার কিছুই মনে নেই।’
স্থানীয়দের সন্দেহ, জালাল এলাকার একটি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। কোনও কিছুর বিনিময় বা আশ্বাসে ওই চক্রের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। ‘অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের’ নাটক সাজিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে ফায়দা লুটেছে। কোনও কারণে তাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি ফিরে এসেছেন।
এদিকে মামলার প্রধান আসামি শঙ্কর সূত্রধর মামলার পর তার বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার ফেলে যাওয়া বাড়িঘর ও সহায়-সম্পত্তি প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। আরেক আসামি হিরা মিয়া এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি। মামলার পর ঘরে চার মেয়ে রেখে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। পুরো সংসার এই কয় বছরে তছনছ হয়ে গেছে। তিনটি বছর পালিয়ে ছিলেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। পরে জামিন পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
পুরো ঘটনাকে সাজানো দাবি করে মামলার আরেক আসামি রুহুল আমিন জানান, জালালকে একটি মহল লুকিয়ে রেখে তাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। তিনিও তিন বছর ফেরারি ছিলেন। আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গাঙ্গাটিয়া গ্রামের আজহারুল ইসলাম ওষুধের ব্যবসা করেন। তিনিও মামলার আসামি। মামলায় পড়ে তার ব্যবসা ও পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তাকে তখন ক্রসফায়ারে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় পুলিশ। তিনি বলেন, ‘ওই দুঃসহ দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনও কান্না পায় তার।’
