X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:৫০আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:২৭




টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড় দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম ২৩ জানুয়ারি শুরুর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নানা জটিলতায় তা পিছিয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশের দিক থেকে তিন পর্যায়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে পারলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এসব কাজ পুরোপুরি শেষ হলে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে।  কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মোহাম্মদ আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ চুক্তি অনুযায়ী তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে— পদ্ধতিগত বিষয় ঠিক করা, দ্বিতীয়টি হচ্ছে— কাঠামোগত ভৌত ব্যবস্থা তৈরি করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে— শারীরিক বা দৃশ্যমান প্রত্যাবাসন শুরু করা। সেভাবে যদি দেখি, প্রথম পর্যায়ের প্রক্রিয়াটি আমরা ভালোভাবে সম্পন্ন করেছি। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করছি। এরপর তৃতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হলে খুব দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন,  ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সীমান্তের পাঁচটি পয়েন্টে ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরির জন্য জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে। সেই জায়গায় ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক  তালিকা তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিতে হবে।’

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে আরও সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনেকগুলো পূর্বশর্ত পূরণের বিষয় আছে। কারণ, আমরা মিয়ানমারকে বলেছি— রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।  রোহিঙ্গাদের জন্য এটি করতে গেলে অনেক কিছু করণীয় আছে। সেগুলো মিয়ানমারে যেমন, তেমনি আমাদেরও প্রয়োজন আছে। সে হিসেবে আমরা আমাদের অংশের কাজ করছি। আশা করি, মিয়ানমার তাদের অংশ করবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের নেপিদো শহরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে বলে উল্লেখ ছিল। মিয়ানমারে এই চুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া, টেকনাফের নয়াপাড়া, দমদমিয়ায় যে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প করার কথা ছিল, তা এখনও দৃশ্যমান নয়। সীমান্তের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের খবরে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করেছে। মিয়ানমারের নাগরিকত্ব, ক্ষতিপূরণসহ পাঁচটি দাবিতে তারা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছে। তবে তাদের নিবারণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে আমরা বাধা দিচ্ছি। কারণ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা সেই কাজটি করছি। আমরা চাই, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ  স্বেচ্ছায় যাতে প্রত্যাবাসন করা হয়।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার পর থেকে প্রাণভয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ছয় লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। তাদের মানবিক সহায়তায় সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এপর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন ও পুরনো মিলে ১০ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

 

/এফএস/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা