X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারমাইকেলের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৬আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৫০





কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষকদের আন্দোলন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত নয় দিন ধরে কলেজে ঢুকতে পারছেন না রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. আব্দুল লতিফ মিয়া। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে কলেজ শিক্ষক পরিষদ। এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।

আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মিয়ার অপসারণ চান।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) অধ্যক্ষের চেম্বারেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্লাশ নিচ্ছেন, পরীক্ষা নিচ্ছেন।

অবস্থান কর্মসূচি আর প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাখার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিখন। তার বক্তব্য, অধ্যাক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

অধ্যক্ষ অপসারণের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করাসহ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ায় এর মধ্যে অধ্যক্ষ দুই দফা কলেজে এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি কলেজে ঢুকতে পারেননি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ বিভিন্ন খাত থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই শিক্ষামন্ত্রীর ভায়রা হিসেবে যখন-তখন বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আখতারুজ্জামান চৌধুরী অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মিয়ার সীমাহীন দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন তিনি। কথায় কথায় শিক্ষকদের গালাগাল দেন, এমনকি বদলি করারও হুমকি দেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার দিনই আপ্যায়নের খরচ দেখিয়ে বিভিন্ন ভাউচার বানিয়ে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আব্দুল লতিফ। কলেজের বিভিন্ন সভা-সেমিনারসহ অনুষ্ঠানের নামে হাজার হাজার টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন তিনি। গত দুই বছর ধরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করানোর নামে অনেক টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ এককাপ চা কাউকে খাওয়াননি তিনি।

এছাড়া গত বছর অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র ফি বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সাড়ে ১৮ লাখ টাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওয়ার কথা। অথচ অধ্যক্ষ একাই সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাবি করায় তা এখনও বণ্টন করা যায়নি। একইভাবে কলেজের ১৮টি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ প্রাকটিক্যাল বিষয়ে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। সে টাকা থেকে অধ্যক্ষ প্রতিটি বিভাগের কাছ থেকে চিঠি দিয়ে অডিট করার নামে ২৫-৩০ হাজার করে ঘুষ নিচ্ছেন। এভাবেই বিভিন্ন খাত থেকে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া যে কোনও বিলের বিপরীতে তিনি শতকরা ৪ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের শতবর্ষ উদযাপনের জন্য সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদা তোলা হলেও শুধু অধ্যক্ষের একগুঁয়েমির জন্য বার বার তারিখ ঘোষণা করেও শতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ভায়রার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে স্বৈরাচারী কায়দায় কলেজকে ব্যক্তিগত সম্পদ বানানোর পাঁয়তারা করছেন।’

 

তালা দেওয়া প্রশাসনিক ভবন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষক পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন হচ্ছে। আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্লাশ নিচ্ছি, পরীক্ষাও নিচ্ছি।’ কিন্তু অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে।

এ ব্যাপারে দুদক রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মোজাহার আলী বলেন, ‘দুদকের রাজশাহী কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।’ এর বাইরে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

শিক্ষক পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিখন জানান, অধ্যক্ষ প্রকাশ্যই ঘুষ নেন। তার সোজাসাপ্টা কথা, তাকে নির্দিষ্ট পরিমান পারসেনটেজ দিতে হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের সঙ্গে তিনি অশোভন আচরণ করেন, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সে কারণে শিক্ষক পরিষদ সভা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে।

অন্যদিকে শিক্ষকদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। তারাও ঘোষণা দিয়েছে, অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারাও আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, কোনও সরকারি কর্মকর্তা কর্মবিরতি পালন করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান উপাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের চাকরি আছে ছয় মাস, আর আমার আছে পাঁচ মাস। উনি অধ্যক্ষ হতে চেয়েছিলেন, পারেননি। ফলে উনার অনেক ক্ষোভ। উনি সারাদিন কক্ষে বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখেন, আমি কী করি।’

নিজে কখনও কোনও দুর্নীতি করেননি দাবি করে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তদন্ত করা হোক, তারা প্রমাণ করুক আমি দুর্নীতি করেছি কিনা।’

আর শিক্ষামন্ত্রীর ভায়রা পরিচয় দিলে তো অফিস করতাম না জানিয়ে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘আমি রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। কিছু শিক্ষক আছেন যারা কলেজটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন, সেটা অনেকেই জানে।’

মাঝে মাঝে একটু-আধটু রাগারাগি করি স্বীকার করে তিনি বলেন,‘শিক্ষকরা বানান ভুল করে চিঠি নিয়ে আসলে একটু রাগ হই।’

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন