X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ জোহা দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি রাবি’র

সিরাজুচ ছালেকীন, রাবি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫৮আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫৮

ড. শামসুজ্জোহা (ফাইল ছবি)

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে। সেদিন শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করে এক অনন্য নজির তৈরি করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে রাবি কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ ড. জোহা দিবস পালন করে আসছে। কিন্তু জাতীয়ভাবে এখনও এ দিবসের স্বীকৃতি মেলেনি।

কী ঘটেছিল সেই দিন

এ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী মুহম্মদ আবদুল খালেক। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি ‘শহীদ ড. শামসুজ্জোহা ও আমি’ এবং ‘শহীদ ড. শামসুজ্জোহা’ নামে দুটি বইও রচনা করেছেন। বই দুটিতে ওইদিনের ঘটনা উল্লেখ করে লিখেছেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হলে উপাচার্যের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ফেলে ছুটে যান ড. জোহা। ছাত্রদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনেন। তাতেই বিপত্তি ঘটে। প্রশাসন মনে করে, যে ব্যক্তি এক ডাকে ফেরাতে পারে সেই হয়তো ছাত্রদের রাস্তায় নামিয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সেদিন তার কথা কাটাকাটিও হয়। সেই মিছিলে আহত ছাত্রদের তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেইদিনই রাত ১০টায় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভায় ড. জোহা বলেন, ‘শুধু ছাত্ররা নয়,আমরা সবাই মিলে এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো, মরতে যদি হয় আমরা সবাই মরবো।’

পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে রাবি প্রধান ফটকের কাছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ বাধে। এসময় সেনারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে উদ্যত হলে সে সময়ের প্রক্টর ড. জোহা বলেন, ‘প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার। আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে এখান থেকে।’ অনুরোধ উপেক্ষা করে লেফটেন্যান্ট বলেন, ‘ফায়ার অ্যান্ড কিল দেম’। গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। তখন তার ওপরই গুলি চালায় সেনারা।

একইরকম বর্ণনা পাওয়া যায় শহীদ শিক্ষক ড.শামসুজ্জোহাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দাবানল’, রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুলের পরিচালনায় চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া, আনিসুর রহমান সম্পাদিত ‘তিমির হননে’ শীর্ষক প্রকাশনায় পাওয়া যায় শিক্ষক ড. জোহাকে হত্যার মর্মান্তিক বর্ণনা।

 

জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি

১৯৬৯ সালের ওই মর্মান্তি ঘটনার পরের বছর থেকে দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এরপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু জাতীয়ভাবে ড. জোহার এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি মেলেনি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করে আসছি শহীদ ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যার দিবসটির স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। ২০১৬ সালে ড. জোহা স্মারক বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি তখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। তবে আমরা এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকারের উচিত দিনটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। কারণ, তিনিই প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।’

প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দাবানল’-এর পরিচালক ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দিবসটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছি। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। কিন্তু দাবিটা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’

দীর্ঘদিন ধরে এ স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোও। রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘দিবসটি জাতীয়করণের জন্য আমরা এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ জায়গায় চেষ্টা করা দরকার। আমরা আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কিংশুক কিঞ্জল বলেন, ‘শিক্ষক দিবসকে অবশ্যই জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। কেন এখনও স্বীকৃতি পায়নি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সচেতন হতে হবে।’

কেন জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা তো বারবারই চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে আসছি যে, এটা করা উচিত। এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু আমরা চাই যে, এটা হোক। আমরা প্রস্তাবনা দিয়েও সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি।’

শিক্ষক দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা কর্মসূচি

দিনটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, প্রদীপ প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, পৌনে ৭টায় ড. জোহার মাজার ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসার সমিতি কার্যালয়ে আলোচনা সভা, বাদ জোহর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরান তেলাওয়াত ও মোনাজাত এবং সন্ধ্যায় শামসুজ্জোহা হলে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হবে। এছাড়া, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হতে হবে। এতে স্মারক বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান।

উল্লেখ্য, ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে যান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বশেষ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

 

/এমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি