নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শাসনগাওয়ে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে ৩০টি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিন দশক পূর্বে ৩০টি প্লটের জন্য ২৩ জন ব্যবসায়ী ব্যাংকে অর্থ জমা দিলেও দীর্ঘদিনেও তাদের প্লট বুঝিয়ে দেয়নি বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ। বরং সম্প্রতি ওই প্লটগুলো চড়ামূল্যে শিল্পমালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় ওই ২৩ ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে সম্প্রতি আদালত ওই ৩০টি প্লটের উপর ১ বছরের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিরোধপূর্ণ ওই ৩০টি প্লটে আদালতের নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্পটির অস্তিত্ব রক্ষায় নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্প ইউনিটকে কেন্দ্রীভূত করে পুনর্বাসন ও নতুন কারখানা স্থাপনে ১৯৮৫ সালে মনোটাইপ শিল্পনগর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ১৯৮৮-৮৯ সালে বিসিক শিল্পনগরীতে ৩ কাঠা এবং ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৯০ সালে বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পঞ্চবটীর শাসনগাঁও এলাকায় ৫৮ দশমিক ৫২ একর জায়গার ওপর বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। হোসিয়ারি শিল্পনগরীর ৭১৪টি ইউনিটের মধ্যে পাঁচ কাঁঠার ১৮৬টি বড় প্লট এবং তিন কাঁঠার ৫২৮টি ছোট প্লট।
এদিকে ১৯৮৮-৮৯ সালে বিসিক শিল্পনগরীর বিজ্ঞপ্তি দেখে ৩০টি প্লটের জন্য ২৩ জন ব্যবসায়ী বিসিক এর ব্যাংক একাউন্ট অর্থাৎ জনতা ব্যাংক এসটিডি-৭ ছৈয়দ আলী চেম্বার শাখায় অর্থ জমা দিয়ে বাংলাদেশ হোসিয়ারী সমিতির কাছ থেকে রশিদ নেয়। তবে দীর্ঘদিনেও তাদের ওই প্লটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং বিরোধপূর্ণ ওই প্লটগুলো ২০১৬ সালের জুন মাসে বর্গফুট হিসেবে প্লট করে ১২ জন শিল্প মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে ওই ২৩ জন ব্যবসায়ীর পক্ষে ওসমান গনি গং হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ ওই ৩০টি প্লটে কোনও ধরনের কার্যক্রম না করতে ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং জাস্টিস জাফর আহমেদ এর দ্বৈত বেঞ্চ আরও এক বছরের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন। এছাড়া ওই ২৩ জন ব্যবসায়ী বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা (নং ৮৬৬/২০১৭) দায়ের করেছেন।
এদিকে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওই ৩০টি প্লটে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন ওই ২৩ ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল জানান, আমি ২০১৫-১৭ ও ২০১৭-১৯ মেয়াদে হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বে রয়েছি। ১৯৮৮ সালের দিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে ৭১৪টি প্লটের জন্য ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে ৭০ জন ব্যক্তি প্লটের জন্য ব্যাংকে অর্থ জমা দিলেও তারা প্লট বুঝে পাননি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিসিক শিল্পনগরী ও বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক একাউন্টে খোঁজ নিয়ে তাদের অর্থ পাইনি। আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে এর মধ্যে ২৩ জন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখনো উচ্চ আদালতের আদেশের কোনও কাগজ আমি পাইনি। তারা নারায়ণগঞ্জ আদালতেও একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে শুনেছি। বুধবার তারা ওই বিরোধপূর্ণ প্লটে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড সাটিয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর স্টেট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্লট বুঝে পায়নি এমন ২৩ জন ব্যবসায়ী হাইকোর্টে রিট পিটিশন ও নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তৎকালে বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের জন্য দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই ২৩ ব্যবসায়ী যথাযথ নিয়মে বিসিক শিল্পনগরীর বরাবর আবেদন করেননি। তারা টাকা জমা দিয়েছিলেন হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের বরাবর। তারা বিসিকের কোনও একাউন্টে টাকাও জমা দেননি এবং আবেদনও করেননি। এজন্য তারা প্লট বুঝে পাননি। এছাড়া ওই সময় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে। কারো একার সিদ্ধান্তে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
