X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা শহীদ রফিকের চেহারার মিল নেই তার ম্যুরালে

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:৫৫আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:০০

শহীদ রফিকের ম্যুরাল (বামে) , শহীদ রফিকের ছবি (ডানে)

ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীর অববাহিকার সবুজ জনপদ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা। এখানকার বলধরা ইউনিয়নের পারিল গ্রামেই (এখন রফিকনগর নামে পরিচিত) বেড়ে উঠেছেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিক। তার স্মৃতি রক্ষায় ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মিত ম্যুরালের সঙ্গে তার আসল চেহারার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

আরও জানা যায়, শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার জন্য রফিকনগর গ্রামে ২০০৮ সালে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হলেও তত্ত্বাবধানের অভাবে সেগুলোই আজ বিস্মৃতির অতলান্তিকে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রফিকনগরে স্থাপিত ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরের মূল ফটকের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে রফিকের ম্যুরাল। তবে সেই ম্যুরালের সঙ্গে শহীদ রফিকের চেহারার ছবির কোনও মিল নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রফিকের মুখের অবয়ব বিকৃত করা হয়েছে। এদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে বেহাল দশা রফিক স্মৃতি জাদুঘরের। সেখানে রফিকের স্মৃতিময় তেমন কোনও কিছুই নেই। আবার গ্রন্থাগারেও নেই কোনও বই। স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার শুধু নামে আছে। ওপরের সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছু নেই সেখানে। তাই নতুন প্রজন্মের কারও কোনও আগ্রহ নেই এ জাদুঘর ও পাঠাগারের প্রতি। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলে ধোয়ামোছা শুরু হয় এ জাদুঘর ও পাঠাগারে।

ম্যুরালের ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুব শিগগিরই আগের মুর‌্যালটি সরিয়ে রফিকের মুখের অবয়ব ঠিক রেখে ভাল একজন শিল্পী দিয়ে মুর‌্যালটি নতুন করে নির্মাণ করা হবে।’

জাদুঘরের ও পাঠাগারের ব্যাপারে লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘রফিকের স্মৃতির তেমন কিছুই সংরক্ষণ করা হয়নি এই জাদুঘরে। নেই রফিকের ব্যবহার করা নকশি কাঁথা ও কলমসহ অনেক জিনিস। পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি তিমন কিছুই। শুধু নামকরণের মধ্যেই ‘ব্রাকেট বন্দি’ হয়ে আছে রফিক স্মৃতি জাদুঘর।’

স্থানীয় কলেজছাত্র উজ্জ্বল হোসাইন জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ আসেন এই জাদুঘর দেখতে। তবে এ জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধ বইয়ের সংখ্যা খুবই কম, এটা সত্যিই দুঃখজনক।

২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় এ ভবন

জানা যায়, শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে ৩৪ শতাংশ জমিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। এর আগে ২০০০ সালে রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রশিকা একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছিল। সেখানেই বসবাস করেন শহীদ রফিকের পরিবার। রফিকের নামে গড়া স্মৃতি জাদুঘরে রফিকের শৈশবের কোনও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হয়নি। কিছু স্মৃতিচিহ্ন রাখা আছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। এদিকে ২০১৬ সালে শহীদ রফিকের বাড়ির আঙিনায় বৃহৎ পরিসরে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার। ৩৭ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে ভাষা শহীদ রফিকের পৈতৃক ভিটা। এই জমিটি রফিকের সব ভাইয়ের সন্তানদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। রফিকের নামে তিন শতাংশ জমি রাখা হয়েছে সেখানে। পৈতৃক ভিটার রফিকের বড় ভাই আব্দুল খালেকের স্ত্রী গোলেনূর বেগম (৭০), ভাতিজা শাহজালাল ও তার স্ত্রী বাস করছেন একন। রফিকের একমাত্র জীবিত ভাই খোরশেদ আলম মানিকগঞ্জ সদরে বরাদ্দকৃত সরকারি বাড়িতে থাকেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন ঢাকায়। 

রফিকের ছোট ভাই খোরশেদ আলম জানান, ভাষা আন্দোলনে রফিকের মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। তাই বড় ভাই রফিকের কোনও স্মৃতিই তার মনে নেই। তবে মায়ের মুখে রফিকের অনেক গল্পই তিনি শুনেছেন। সেই গল্পই তার অন্তরে লালন করে আছেন তিনি।

শহীদ রফিকের ভাতিজা আব্দুর রউফ জানান, শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতেই আমাদের খোঁজ পড়ে। সাংবাদিক ও বিভিন্ন মিডিয়ার ভিড় জমে যায় বাড়িতে।

উল্লেখ্য, পারিল গ্রামে ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ। ছোট থেকেই চঞ্চল ছিলেন তিনি। তাকে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি করিয়ে দেন তার বাবা। কিন্তু সেখানে তার মন টেকেনি। কয়েক বছর পর ফিরে আসেন দেশে। ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় সিংগাইরের বায়রা হাই স্কুলে। এ স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন রফিক। এরপর কলেজ জীবন। ভর্তি হন দেবেন্দ্র কলেজের বাণিজ্য বিভাগে। লেখাপড়া শেষ করলেও পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে লেখাপড়া ছেড়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আবারও ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালেই ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন তিনি।

পুলিশের গুলিতে রফিক প্রাণ হারানোর পর ১৯৫২ সালের ২৮ মার্চ তার মামাতো ভাই মোশাররফ হোসেন খান ঢাকার সদর মহকুমা হাকিম এন আহমদের এজলাসে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিচারক ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৩৭ এবং ১৩২ ধারার কথা বলে মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন ।

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ