X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে বন বিভাগের মামলায় ২৯ দিনমজুর ঘরছাড়া

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পঞ্চগড়
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৪৬আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৪

পঞ্চগড়

বন বিভাগের মামলার কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ২৯ জন দিনমজুর পাথর শ্রমিক। চা বাগান ও বনায়ন করার জন্য জমি তৈরি করতে গিয়ে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে পঞ্চগড় বন বিভাগ। ওই দুই মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে একজন জেলহাজতে ও অন্য একজন জামিনে থাকলেও বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাকি ২৯ আসামি।

জানা যায়, বন বিভাগের মামলায় পালিয়ে বেড়ানো ২৯ দিনমজুরের প্রত্যেকেই নিজ নিজ পরিবারের আয়ের মূল অবলম্বন। তাই তারা বাড়িতে থাকতে না পারার কারণে মানবেতন জীবনযাপন করছেন পরিবারের সদস্যরা।

বন বিভাগের দায়ের করা মামলাকে হয়রানিমূলক অভিহিত করে মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা শহরের ডোকরোপাড়া গ্রামের আবু ওয়ারেছ প্রধানের ছেলে আবুল বাশার অভিযুক্তদের পক্ষে এ আবেদন করেন।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ভেলকুপাড়া মাঝবাড়ি মৌজার এসএ ২৭০ নম্বর খতিয়ানের ৪৪ দশমিক ১৭ একর জমির মধ্যে এসএ ৬০০৪ নম্বর দাগের ২৮ দশমিক ৩৫ একর জমির রেকর্ডভুক্ত মালিক ছিলেন মৃত কামেলা খাতুন। তিনি ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তারিখে ৪৮৫৫ নম্বর রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে কুরশি আরা বেগমের অনুকূলে ১৫ দশমিক ৩৮ একর জমি প্রদান করেন। এরপর ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল কুরশি আরা বেগম ২১২৯ নম্বর দলিলে সব জমি তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। একই দিন জমির মূল মালিক কামেলা খাতুন ওই দাগে অবশিষ্ট ১২ দশমিক ৯৭ একর জমি আবারও কুরশি আরা বেগমের নামে ২১৩০ নম্বর দলিলমূলে রেজিস্ট্রি প্রদান করেন। উক্ত জমিতে চা বাগান ও বনায়ন করার জন্য উঁচু-নিচু স্থানগুলো লোকজন দিয়ে সমান করা হয়।

কিন্তু বন বিভাগের বিট অফিসার এসব জমি নিজেদের দাবি করে জমি থেকে পাথর উত্তোলনের অপরাধে গত বছরের ৫ নভেম্বর ১৫ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে এ বছরের ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় ১৬ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ দুটি মামলায় তরিকুল ইসলাম নামে এক দিনমজুর জেলহাজতে আছেন ও অপর আসামি মোকসেদুল ১৫ দিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে রয়েছেন। অন্য আসামিরা পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকার কর্তৃক ভূমি জরিপের পর ১৯৬২ সালের গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমি মালিকদের নামীয় এস্টেট ও অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনেন্সি অ্যাক্টের ৪৬ ধারায় জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ই্উনিয়নের মাঝবাড়ি মৌজা উল্লেখপূর্বক এসএ ২৭০ নম্বর খতিয়ানে কামেলা খাতুনের নামীয় ৬০০৪ নম্বর দাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে উল্লেখিত দাগের সব জমি বন বিভাগের গেজেটে জমির মালিক হিসেবে আমিনুল ইসলাম, পিতা আব্দুস সামাদ নামে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আমিনুল ইসলাম নামে ওই এলাকায় কোনও ব্যক্তি বা তার কোনও ওয়ারিশের অস্তিত্ব নেই। তাই কামেলা খাতুনই উক্ত জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন এবং তার কাছে উক্ত জমির কবলা ক্রেতারা বর্তমানে জমির মালিক হিসেবে ভোগদখলে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য পঞ্চগড় বন বিভাগের ফরেস্ট রেঞ্জার কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পঞ্চগড় সদর বিটের বিট অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘উল্লেখিত জমির মূল মালিক আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে সরকার বন বিভাগের নামে জমি অধিগ্রহণ করে। কামেলা খাতুন ওই জমির মালিক হয়ে থাকলে তারা আদালতে প্রমাণ করবে। আমরা এখানে চাকরি করতে এসেছি। জোর করে কারও জমি নেওয়ার কোনও কারণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন বিভাগের জমি থেকে পাথর উত্তোলন করার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ বাচ্চু জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমি বন বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র তলব করেছিলাম। তারা জমির সমর্থনে একটি মাত্র গেজেটের কপি আমাকে দিয়েছে। সেখানে ১৯৬১ সালে প্রকাশিত গেজেটে ওই জমির মালিক আমিনুল ইসলামকে দেখানো হয়েছে। অথচ ১৯৬২ সালের রেকর্ডে জমির মালিক হিসেবে দেখা যায় মৃত কামেলা খাতুন। তাই কামেলা খাতুনের কাছ থেকে যারা কবলা মূলে জমি কিনে নিয়েছেন তারাই জমির প্রকৃত মালিক। 

 

 

/এএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী