X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে অবহেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা চর্চা

বিশ্বজিৎ দেব, জামালপুর
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:২২আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:২৭

জামালপুরে অবহেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা চর্চা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষার হার মাত্র ২৫ ভাগ। এর মধ্যে ২০ ভাগই শুধু অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। এই জনগোষ্ঠীকে মৌলিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো ভাষা। তাদের জন্য নেই ভাষা-সংস্কৃতি উপযোগী কোনও মৌলিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক কোনও উদ্যোগ আজও গ্রহণ করা হয়নি।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নে গারো পাহাড়ের উপত্যকা দিঘলাকোনা, বালুঝরি, টিলাপাড়া, শোকনাথপাড়া, হাড়িয়াকোনা, বাবলাকোনা, গারোপাড়া, রামকনপাড়া, সাতানীপাড়া, বৈষ্ণবপাড়া, কনেকান্দা, লাউচাপড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে গারো, হাজং, কোচসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ বসবাস করেন। আর এই সবগুলো গ্রামের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি স্কুল। জামালপুরে অবহেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা চর্চা

বকশীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবতাব উদ্দিন জানান, সাতানীপাড়ায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া বৈষ্ণবপাড়ায় নির্মাণাধীন রয়েছে আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  ২০০১ সালে ফিলিপাইনের নাগরিক রাবানল আলেকস্ত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কুলবিহীন দিঘলাকোনা গ্রামে প্রায় এক একর জমির ওপর সাধু আন্দ্রে ধর্মপল্লী নামে প্রাথমিক স্কুল গড়ে তোলেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ ডাইসোসিস (ধর্মপ্রদেশ) এর অর্থায়নে পরিচালিত এই স্কুলে ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এখানে চার জন শিক্ষক রয়েছেন। মানসম্মত পড়াশোনার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অতি দরিদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়তে আসে। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে স্কুলটি নানা সমস্যায় পড়েছে। এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে দুটি মাটির দু’চালা ঘর। ঘরে টিনের চালগুলো খুবই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই ঘরে ভেতরে পানি পড়ে। স্থান কম হওয়ায় রাতে অতি নিম্ন মানের তিন-তলা খাটে গাদাগাদি করে বসবাস করে আসছে ১৫০ জন শিশু শিক্ষার্থী। ফলে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া সময়-অসময়ে ওপারে ভারতের গহীন পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যহাতির আক্রমনের ভয়েও থাকে শিশু শিক্ষার্থীরা। আবাসন সংকটের কারণে আগ্রহ থাকার পরও দূর থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে এসে ভর্তি হতে পারছে না। এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থী নয়ারাং ত্রিপুরা, গান্দ্রিমা ত্রিপুরা জানায়, ‘এখানে অনেক ভালো পড়ালেখা হয়। তবে রাতের বেলায় গাদাগাদি করে ঘুমোতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। এছাড়া স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় রাতের বেলায় হাতির ভয়ে থাকতে হয়।’ ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হয় ১৫০ শিক্ষার্থীকে

শিক্ষার্থী জেরিন ত্রিপুরা, আকাশ মুরং, সাধু সাংমা, পাপড়ী মুরং বলে, ‘সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। আমরা কিছুই পাই না।’  

এ ব্যাপারে ধর্মপল্লীর প্রধান শিক্ষক সাদদিওস মুরং জানান, ‘এখানে যারা লেখাপড়া করতে আসে তারা সবাই অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ডাইসোসিস থেকে যে পরিমাণ অর্থ দেয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। যা দিয়ে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর খাবার, পোষাক, শিক্ষা উপকরণ, ঔষধ, শিক্ষকের বেতন ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়।’

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, ‘আমরাক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই  ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ভাষার ওপর আলোচনা করে যাচ্ছি। আমরা তাদের ভাষা চর্চার জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় স্থাপনেরও উদ্যোগ এরইমধ্যে হাতে নিয়েছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের শিক্ষার প্রসার ও এর সুরক্ষার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

 

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ