X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ

সোয়াইব রহমান সজীব
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৭আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্যের পদ নিয়ে এখানকার শিক্ষক রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মেরুকরণ আরও জোরদার হয়েছে।এরই মধ্যে উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলাম পুনর্নিয়োগ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যেই বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা নির্বাচন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা জানিয়েছেন তারা। তাদের সমর্থন আওয়ামীপন্থী কোন বলয়ে যাবে, তার দিকে নজর রাখছেন সবাই।
আসন্ন শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে দুইটি প্যানেল। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, অন্যটির নেতৃত্বে সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির। উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলামের প্রথম মেয়াদের প্রায় পুরোটা সময় তারা দু’জন একাট্টা ছিলেন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় প্রথমবারের মতো তাদের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে। এবার শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। নির্বাচনে ফারজানা ইসলামের সমর্থিত প্যানেল বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমর্থন পেতে যাচ্ছে বলেও ধারণা করছেন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী শিক্ষকরা গত জানুয়ারি থেকেই প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে পুনর্নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিভাজন প্রকাশ্যে আসে।

বিভাজনের জের ধরে আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার কারণ দেখিয়ে ফারজানা ইসলামের অনুসারী ছয় শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন দুই উপ-উপাচার্য, আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন ও সম্পাদক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন ডেকে সংগঠনে দুই উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আমরা সংগঠনবিরোধী কোনও কার্যক্রমে লিপ্ত না। অধ্যাদেশ মেনে রাষ্ট্রপতি ফারজানা ইসলামকে উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ দিয়েছেন। এরপরও যারা উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি করছেন, তারা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।’ একজন ‘বিশেষ ব্যক্তি’র নির্দেশে অগণতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পরে শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারীরাই অভিযোগ তোলেন, ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকরা তাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন ও হুমকি দিয়েছেন। এ অভিযোগে সোমবার দেড় ঘণ্টা পুরনো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন তারা। এসময় উপাচার্য তার কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।

অবরোধে শরীফ এনামুল কবির, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অসিত বরণ পাল, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অজিত কুমার মজুমদারসহ প্রায় ৪০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক লুৎফর বলেন, ‘তারা সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছে। উপাচার্যের অনুসারী শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিনসহ কয়েকজন শিক্ষককে ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিয়েছে।’

উপ-উপাচার্য ও শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করায় তাদের শোকজ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি না।’

এর মধ্যে, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম। এ নির্বাচনে ফারজানা ইসলামের সমর্থন পাওয়া শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্যদিকে, শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারীরা লড়বেন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ প্যানেল থেকে। মোট ১৫টি পদের বিপরীতে ওই দুই প্যানেলের ২৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আর খালেদা জিয়াকে ‘সাজানো মামলায় কারাবন্দি করে রাখার’ প্রতিবাদ হিসেবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপন্থী শিক্ষকরা।

‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামে’র ব্যানারে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন পদে ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানান তারা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পদ ভাগাভাগিতে না গিয়ে ফারজানা ইসলাম সমর্থিত প্যানেলকেই জয়ী করতে চাইছেন তারা। তবে শিক্ষকরা এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের কারণে যদি কোনও পক্ষ সুবিধা পায়, সেটি তাদের ভাববার বিষয় নয়।

নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রেখে আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। পেশাজীবী হিসেবে আমরা প্রতিবাদের জায়গা থেকে এই নির্বাচন বর্জন করছি। বৃহত্তর গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা ক্ষুদ্র গণতন্ত্র চর্চা থেকে বিরত থাকছি।’

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব ও গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে মূলত গণতন্ত্রকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করা হয়েছে। গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য কার্যত আমরা রাস্তায় আছি। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করছি।’

শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে লড়বেন যারা

উপাচার্য ফারজানা ইসলাম সমর্থিত ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকপরিষদ’ প্যানেল— সভাপতি পদে নূরুল আলম (পদার্থবিজ্ঞান), সহ-সভাপতি রাশেদা আক্তার (নৃবিজ্ঞান), সম্পাদক বশির আহমেদ (সরকার ও রাজনীতি), কোষাধ্যক্ষ  নুহু আলম (উদ্ভিদবিজ্ঞান), যুগ্ম সম্পাদক সিকদার মো. জুলকারনাইন (প্রত্নতত্ত্ব) সদস্য- আব্দুল মান্নান (পদার্থবিজ্ঞান), আলী আজম তালুকদার (মাইক্রোবায়োলজি),লুৎফুল এলাহী (ইতিহাস), তাপস কুমার দাস (আইন ও বিচার), মুহাম্মদ হানিফ আলী (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), আব্দুল মান্নান চৌধুরী (পদার্থবিজ্ঞান)মোতাহার হোসেন (আইবিএ), সৈয়দা ফাহলিজা বেগম (ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান)।

শরীফ এনামুল কবির সমর্থিত ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ প্যানেল— সভাপতি পদে ফরিদ আহমদ (পদার্থবিজ্ঞান), সহ-সভাপতি শফি মুহাম্মদ তারেক (পরিবেশ বিজ্ঞান), সম্পাদক ফরিদ আহমেদ (দর্শন), কোষাধ্যক্ষ কবিরুল বাশার (প্রাণিবিদ্যা), যুগ্ম সম্পাদক  আওলাদ হোসেন (রসায়ন), সদস্য-  শাহেদুর রশিদ (ভূগোল ও পরিবেশ), সৈয়দ হাফিজুর রহমান (পরিবেশ বিজ্ঞান), ওয়াহিদুজ্জামান (আইআইটি), লাইজু নাসরীন (ইংরেজি), মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান  (লোক প্রশাসন),  এজহারুল ইসলাম (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), মোয়াজ্জেম হোসেন (পরিসংখ্যান),সাব্বির আলম (গণিত), নাসরীন সুলতানা (দর্শন),ইউসুফ হারুন (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং)।    

 

/টিআর/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক 
তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক 
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…