X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে নিষ্ক্রিয় বিএনপি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২১:৩১আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:৩০

রংপুর মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছেন এগারো পুলিশ সদস্য (ছবি- প্রতিনিধি)

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অনশন, গণস্বাক্ষর অভিযান, প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়। এ ডাকে অন্যান্য বিভাগীয় নগরী সাড়া দিলেও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে রংপুর বিএনপি। এখানে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে থেকে বিএনপির চলমান কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি মহানগর ও জেলা বিএনপির কোনও নেতাকর্মীকে। মহানগর বিএনপির নিষ্ক্রিয়তার প্রভাব পড়েছে জেলার ৮ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমেও। যে কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রের ডাকা কোনও কর্মসূচিতেই মাঠে দেখা যায়নি উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরও।

সম্প্রতি মহানগর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে থেকে এ কার্যালয় খোলা হয় না। খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ার পর পরই কেন্দ্রীয় বিএনপি দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়। কিন্তু রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা একবারের জন্যও মিছিল বের করেননি। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের ডাকা মানববন্ধন, অনশন, গণস্বাক্ষর অভিযানেও রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি।

মহানগর বিএনপির কার্যালয় থাকায় রংপুর সদর উপজেলায় বিএনপির কোনও কার্যালয় নেই। তবে তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয় আছে। কিন্তু এ কার্যালয় বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সেখানেও দলের কোনও কর্মসূচি পালন করা হয় না।

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান জানান, তিনি অসুস্থ। তাই দলীয় কর্মকাণ্ড একটু ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে তিনি সুস্থ হলেই আবারও পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই নেই। দলীয় কার্যালয় শেষ কবে খুলেছে, তাও কেউ জানে না। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেও তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি বা সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বদরগজ্ঞ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, তাদের কার্যালয় ‘বেশ কিছুদিন’ ধরে বন্ধ। কার্যালয় বন্ধ থাকায় নেতাকর্মীদের দেখা-সাক্ষাতই হয় না, কেন্দ্রের ডাকা কর্মসূচি পালন তো দূরের ব্যাপার।

বদরগজ্ঞ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে কার্যালয় খোলা হয় না। দলীয় কর্মসূচি আপাতত পালন করা হচ্ছে না। তবে ২-৪ দিনের মধ্যে অফিস খুলে অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়ে বসবো।’

পীরগাছা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেন, তাদের শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফছার আলীই বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি। কিন্তু এই উপজেলাতেও বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোনও কার্যক্রম নেই। উপজেলা সদরের প্রধান বাজারে বিএনপির কার্যালয় থাকলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় কোনও কর্মসূচি পালিত হয়নি।

তবে পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা দাবি করেন, ‘আমাদের শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হচ্ছে।’

কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয় অনেকদিন ধরেই বন্ধ। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ অবধি এ উপজেলায় কোনও মিছিল-সমাবেশ হয়নি। উপজেলা বিএনপির কিছু কর্মী জানান, গত ৬ মাস ধরে এখানে কোনও সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতাও জানান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক দু’জনই বড় ব্যবসায়ী। তারা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদ ভরসার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

মিঠাপুকুর উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকদিন ধরে নেই বললেই চলে। কার্যালয়ও বন্ধ রয়েছে অনেকদিন ধরে।

তবে পীরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির কিছু কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, পুলিশের হামলা-মামলার কারণে তারা দলীয় কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, তার নিজ উপজেলা পীরগঞ্জে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান চলছে। পুলিশ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এছাড়া, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের দমনপীড়নের কারণে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামতে পারছে না।

মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, তাদের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু গ্রেফতার হওয়ার পর শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কার্যালয়ে আসেন না। তাই দলীয় কার্যকর্ম চলছে ঢিমেতালে।

তবে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন দাবি করেন, তিনি নিয়মিতই দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে কোনও কর্মসূচিতেই ৩০-৪০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে পাওয়া যায় না। মোজাফফর হোসেন আরও বলেন, ‘যেভাবে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে, তাতে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। অবশ্য পুলিশের এমন দমনপীড়নে দলের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অনেক বেড়েছে।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!