X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরফুদ্দিন ঝন্টুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রংপুর

রংপুর প্রতিনিধি
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৫আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:০৪

সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনের সুপরিচিত মুখ ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর মৃত্যুতে কেবল রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, গোটা রংপুরেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ঝন্টুর মৃত্যুতে রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। সাধারণ মানুষরাও বলছেন, ঝন্টু ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা।
আজ রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শরফুদ্দিন আহামেদ ঝন্টুর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। গত ৩১ জানুয়ারি স্ট্রোক করলে ঝন্টুকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরদিন ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা বিএসএমএসইউ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এখানেই আইসিইউতে গত ১৫ দিন চিকিৎসায় থাকার পর আজ দুপুর সাড়ে ৩টায় মারা যান ঝন্টু।
সাবেক এই মেয়রের মৃত্যুকে গভীর শোক জানিয়েছেন সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝন্টু ভাইয়ের মৃত্যুতে রংপুরবাসী একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল এক শোক বার্তায় মুক্তিযোদ্ধা ঝন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তার মৃত্যুতে একজন ত্যাগী নেতাকে হারালো রংপুর।’
রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সরফুদ্দিন ঝন্টুর মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো। রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে আমরা এক দলে ছিলাম না। কিন্তু তার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক স্মৃতিও রয়েছে আমাদের।’
রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বীর মুক্তিযোদ্ধা ঝন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করে তার আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
এ ছাড়া, রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে সাবেক এই মেয়রের মৃত্যুতে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও শোক প্রকাশ করেছেন। সাধারণ মানুষরাও তার এই মৃত্যুতে শোকাহত বলে জানিয়েছেন।
রংপুর সদরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ঝন্টু ভাই অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদ। উনি আশির দশক থেকে রাজনীতি করে আসছেন। এই নির্বাচনে (সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন) তিনি না জিতলেও জীবনে বহু নির্বাচনে তিনি জিতেছেন। সংসদ সদস্যও হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, তার জনপ্রিয়তা কত বেশি ছিল।’
স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তিনি ছিলেন রংপুরবাসীর অভিভাবকের মতো। রংপুরের মানুষের জন্য তিনি যা করেছেন, তার কোনও তুলনা হয় না।’
এদিকে, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানিয়েছেন, ঝন্টুর পরিবারের সবাই ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। তার মরদেহ রংপুরে নিয়ে আসার পর জানাজা ও দাফনের সময় জানানো হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন সরফুদ্দিন ঝন্টু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ১৯৮৭ সালে তিনি রংপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৯২ সালে রংপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনেও তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসময় তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন।
১৯৯১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কারাগারে থাকাকালে তার মুক্তির জন্য রংপুরে এরশাদ মুক্তি পরিষদ গঠন করা হলে সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ওই সময়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যান এই রাজনীতিবিদ। পরে ১৯৯৬ সালে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েও জয়ী হন তিনি। পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ঝন্টু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
২০১২ সালে রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করলে প্রথম নির্বাচনেই তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হন। তার মেয়াদ শেষ হলে মেয়র পদে দ্বিতীয় ও দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হত্যা মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের দুই কর্মকর্তার জামিন
হত্যা মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের দুই কর্মকর্তার জামিন
প্রজন্মের জন্য দুই মহাবিপদ!
প্রজন্মের জন্য দুই মহাবিপদ!
বরিশালে ঈদে বেড়াতে এসে দুই চাচাতো বোনসহ ৩ জন লাশ
বরিশালে ঈদে বেড়াতে এসে দুই চাচাতো বোনসহ ৩ জন লাশ
রুশ হামলা ঠেকানোর ক্ষেপণাস্ত্র ফুরিয়ে গেছে: জেলেনস্কি
রুশ হামলা ঠেকানোর ক্ষেপণাস্ত্র ফুরিয়ে গেছে: জেলেনস্কি
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’