স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে গেলেন বেড়াতে। কিন্তু স্ত্রী ফিরে এলেন একা, তাও লাশ হয়ে। স্বামীও মারা গেছেন। কিন্তু তার মরদেহ শনাক্ত হতে দেরি হওয়ায় আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হলো আখতারা বেগমের মরদেহ। মঙ্গলবার সকালে তার দাফনও সম্পন্ন হলো।
গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করার সময় তাদের বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় নিহত হন রাজশাহীর পাঁচ নাগরিক। এদের মধ্যে রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা দম্পতি হাসান ইমাম ও বিলকিস বানুকে সোমবার ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার গোলাম কিবরিয়া ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে বিলকিস আরা মিতুকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকায় রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আখতারা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উপশহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পশ্চিম দিকের মাঠে জানাজা শেষে মরহুমাকে গোরহাঙ্গা গোরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মরহুমার বড় জামাই অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন জানান, ‘ঢাকা থেকে সরাসরি প্রথমে আমার শ্বাশুড়ি মরহুমা আখতারা বেগমকে তার শ্বশুড়বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গ্রামের লোকজনকে মরদেহ দেখিয়ে রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়। রাজশাহীতে জানাজা শেষে তাকে নগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
বাংলা ট্রিবিউনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার গোমস্তাপুরে বেগুনবাড়িতে নজরুল ইসলামের পৈত্রিক বাড়িতে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আখতারা বেগমের মরদেহ এসে পৌঁছায়। এ সময় কফিনে আপনজনকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। শেষবারের মতো একনজর আকতারার মরদেহ দেখার জন্য ছুটে আসেন আশপাশের গ্রামের মানুুষ। জানাজা শেষে লাশ রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়।
আখতারা বেগমের বোনের মেয়ে উপশহরের বাসিন্দা তৌহিদা খাতুন পারভীন জানান, ‘খালুর (নজরুল ইসলাম) মরদেহও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। হাতের ঘড়ি ও রাজশাহীর নিউ নেশন টেইলার্স থেকে তৈরি প্যান্টের স্টিকার দেখে তার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তার ডিএনএও টেস্ট করা হয়েছে। তার মরদেহও সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কয়েকদিনের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।’
উপশহর এলাকার এক নম্বর সেক্টরের ৩১৯ নম্বর বাড়িটি থাকতেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও আখতারা বেগম দম্পতি। দুই মেয়ের নামের নামাঙ্কিত ‘কাঁকন-কনক’ বাড়িটির দুই তলায় থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শরীরর্চা বিভাগের শিক্ষক (অব.) আখতারা বেগম। বড় মেয়ে কাঁকনের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কনক ঢাকার উত্তরার উইমেনস মেডিক্যাল কলেজের ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট। তারা দুইজনেই ঢাকায় থাকেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর বাবা-মা দুইজনেই বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন। রাজশাহীতে আসতেন ভাড়া নিতে আর বাড়িঘর দেখাশুনা করতে।
আর নগরীর সিরোইলের ‘জননী’ নামের ১৭২ নম্বর বাসার ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন দম্পতি হাসান ইমাম (৬৫) ও বেগম হুরুন্নাহার বিলকিস বানু। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম ও কলেজ শিক্ষক বিলকিস বানুর দুই ছেলে কায়সার ইমাম ও তৌকির ইমাম। তাদের দুই ছেলেই থাকেন কানাডায়।
বিলকিস বানুর ছোট ভাই বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মো. মালেক জানান, সোমবার বিকেলে আসর নামাজের পর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাতে রায়েরবাজার কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজে শেষে তাকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এসময় তাদের দুই ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।