X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-দূষণে খরস্রোতা করতোয়া এখন ‘পচা নর্দমা’

মো. নাজমুল হুদা নাসিম, বগুড়া
২২ মার্চ ২০১৮, ০৭:৪৮আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ১২:৪৯

দখল-দূষণে খরস্রোতা করতোয়া এখন ‘পচা নর্দমা’

অব্যাহত দখল, সংস্কার না হওয়া ও দূষণে এককালের খরস্রোতা করতোয়া নদী আজ পচা নর্দমায় পরিণত হয়েছে। নদীর তীর দখল করে শহরের দত্তবাড়ি ঘাট, কাজীখানা ঘাট, ডিসি অফিসের সামনের ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ চললেও কেউ দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একদিকে দীর্ঘদিন খনন না হওয়া ও অন্যদিকে দখল চলতে থাকায় বগুড়ার মানচিত্র থেকে ‘করতোয়া নদী’ হারিয়ে যেতে বসেছে।

স্থানীয় জনগণ এ দখলের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতাকে দায়ী করে অবিলম্বে প্রভাবশালীদের কবল থেকে নদীরক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখা নদীরক্ষায় গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও শুরু করেছে।

প্রভাত চন্দ্র সেনের ‘বগুড়ার ইতিহাস’ গ্রন্থ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের হিমালয় পাদদেশ থেকে করতোয়া নদীর উৎপত্তি। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে প্রবেশ করে এ নদী। সেখান থেকে বগুড়ার বুক চিরে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে হুরা নদীর সঙ্গে মিলিত হয় করতোয়া। মোট ৫৯৭ কিলোমিটার বা ৩৭৩ মাইল দৈর্ঘ্যের করতোয়া নদীতে আশির দশকে প্রচুর পানি প্রবাহ ছিল। বগুড়া শহরের শাহ্ ফতেহ আলীর (রহ.) মাজার সংলগ্ন এ নদীতে ঘাট ছিল। সেখানে বড় বড় সওদাগরী পালতোলা নৌকা এসে ভিড়তো। পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি থেকে বগুড়া পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর দুই তীরে সেচ দেওয়া যেত। তীরে বসবাসকারীরা খাবার পানি সংগ্রহ ও প্রাত্যহিক কাজ করতেন এ নদীর পানি দিয়ে। খরস্রোতা হওয়ায় পারাপার খুবই কষ্টসাধ্য ছিল।

নদী তীর দখল করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ

তবে নদীর পানি প্রবাহ পরিবর্তন করে বাঙালি নদীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৯৮৮ সালে উজানে গাইবান্ধার কাঁটাখালিতে রেগুলেটর দেওয়া হয়। ফলে করতোয়ার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর দুই তীরে ভূমি দস্যুদের দখলের মহোৎসব শুরু হয়। অনেক স্থানে শ্যালোমেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু হয়। ফলে নদীর দু’ধারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে বগুড়া পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা, ড্রেনের পানি নদীর বুকে এসে পড়ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন উৎস থেকে ১৪-১৫ টন বর্জ্য নদীর পানিতে মিশছে। নদীর পানি পচে কালো হয়ে গেছে। বগুড়া জেলা প্রশাসনের টিমের সার্ভে অনুযায়ী, প্রভাবশালী ২৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শহরের বিভিন্ন স্থানে নদী দখল করেছে। প্রভাবশালীরা শহরের দত্তবাড়ি, ডিসি অফিসের সামনের ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবণ নির্মাণ করছে। আবার নদী তীরে কেউ কেউ কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও অনেকে দখলের জন্য ঘিরে রেখেছে। একই অবস্থা অন্যান্য এলাকাতেও। সব মিলিয়ে দখলের পরিমাণ সাড়ে পাঁচ একর, যার মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা।

এদিকে করতোয়া নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ সোচ্চার হলে জেলা প্রশাসন নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগে নেয়। এরপর দীর্ঘদিনেও নদীটি দখলমুক্ত করা যায়নি। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে।

বাপা বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, বগুড়াকে বাঁচাতে হলে করতোয়া নদী সচল রাখতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক পরিবেশগত সচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগ।

বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর জানান, বগুড়ার ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক করতোয়া নদী। নদীকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

পচে গেছে নদীর পানি, যত্রতত্র সেতু

বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক তন্ময় সান্যাল সাংবাদিকদের জানান, করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও পানির প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখতে ২০১৫ সালের ২২ জুন জেলা প্রশাসকসহ ২১ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আদালত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসন কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও আজ পর্যন্ত পুরোপুরি নদীর তীর দখলমুক্ত হয়নি।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিরুল ইসলাম করতোয়া নদীর দখল ও দূষণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে করতোয়া নদী খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৭ কিলোমিটার ও বগুড়া এলাকায় ১১২ কিলোমিটার মিলে মোট ১১৯ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বাবদ ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ দখল উচ্ছেদ করলেও তা আবার দখল হয়ে যায়। তাই ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নদী খনন ও দুই তীরে ওয়াকওয়ে তৈরি হলে এমনিতে অবৈধ দখলবাজরা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। নতুন করে নদীর তীর দখল হবে না।’

 

 

/এমও/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
বেসিস নির্বাচন২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা