আগামী ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ বছরেরও বেশি সময় পর জেলায় তার এই সফরকে কেন্দ্র করে চলছে জোর প্রস্তুতি। চোখ জুড়ানো সাজে শহর জানানো এবং প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার জন্য নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অফিস, আদালত, রাস্তাঘাট, রোড আইল্যান্ড, বড় মাঠ সবই ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে তকতকে করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ঠাকুরগাঁও শহর ঘুরে দেখা যায় সবখানেই চলছে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউস, এলজিইডি, সড়ক ভবন, পিটিআই, জেলা আনসার-ভিডিপি, বিদ্যুৎ ভবন, গণপূর্ত ভবনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘষামাজা ও রংয়ের কাজ চলছে। শহরের রাস্তায় চলছে পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ। চলছে রোড ডিভাইডারে রং করার কাজ। যে দিক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে প্রবেশ করবেন সেদিকের ভাঙাচোড়া রাস্তা ও ভবনের প্রাচীর মেরামতও চলছে জোরেসোরে। রাস্তার খানাখন্দ ভরাট করা হচ্ছে দ্রুতগতিতে। সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাস্তায় রাস্তায় তোরণ নির্মানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ২৯ মার্চকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁও শহর যেন চাঙা হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ মার্চ বিকাল ৩টায় জিলা স্কুল বড়মাঠের সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। তার সমাবেশকে সফল করতে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এই জনসভায় পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এজন্য ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়েও জনসংযোগ, প্রচারণা ও মাইকিং চলছে। জনসভাকে লোকারণ্য করার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশা ভুলে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
১৭ বছর ৩ মাস পর ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী আসছেন, এ জন্য জেলার মানুষের দাবি দাওয়ার তালিকাটাও একটু বড়। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি-বন্ধ থাকা রেশম কারখানা চালু, বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা, ঠাকুরগাঁও থেকে সরাসরি ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ইপিজেড, রুহিয়া উপজেলা ঘোষণাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রয়েছে এই তালিকায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রচারনা চালাতে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলেন।
ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহুরুল ইসলাম জানান, ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১১টায় ঠাকুরগাঁও বিজিবি সেক্টর মাঠে হেলিকপ্টারে করে অবতরণ করবেন। ৩টা পর্যন্ত কয়েকটি স্থাপনা উদ্বোধন ও উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর তিনি বড়মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
ঠাকুরগাঁও এর জেলা প্রশাসক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এ লক্ষ্যে প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনকে সমন্বয় করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি তিলোত্তমা শহরের চিত্র তুলে ধরতে কাজ করছি।’
পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনসভাস্থলের আশপাশে বিভিন্ন বাড়িতে কারা অবস্থান করছেন তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ১৭ বছর পর প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। জনসভায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগমের জন্য নেতাকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঠাকুরগাঁওবাসীর দাবি- ঠাকুরগাঁও-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন চালু, ব্রিটিশ আমলের বিমান বন্দর চালু, কৃষিভিত্তিক ইপিজেড চালু, একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন। এছাড়াও বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি চালু ও যানজট নিরসনে বাইপাস সড়কের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে।’