X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী বছরের মধ্যে উৎপাদনের প্রস্তুতি

আবুল হাসান, মোংলা
২২ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৪আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৮, ০৯:১২

খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী বছরের মধ্যেই উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে। আগ্রহ বাড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ এটি বিশ্ব মানের অর্থনৈতিক অঞ্চলে রুপান্তরিত হবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্লট বুকিংও। ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, প্লট নেওয়ার প্রতিযোগিতায় আগ্রহী পাঁচটি বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

ইকোনমিক জোনের (বেজা) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাম মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। উৎপাদনের টার্গেট নিয়েই আমরা এগুচ্ছি। ফলে  দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এই অর্থনৈতিক অঞ্চল আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এতে আমদানি-রফতানির প্রসারসহ কয়েক গুন গতি বাড়বে মোংলা বন্দরের। আর দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা ছাড়াও মোংলাসহ উপকূলীয় এলাকার হতদরিদ্র মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানও হবে।’

শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশ, উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ দিতে, সর্বোপরি অনগ্রসর এলাকা উন্নয়নের লক্ষ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা এই উদ্যোগ নিয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেয়েছে শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি কোম্পানিটির সঙ্গে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোংলা অথনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ২০৫ একর ভূমিতে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে এটি নির্মাণাধীন। আগামী ৫০ বছর অর্থনৈতিক অঞ্চলটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেড। প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবন, বাউন্ডারি ওয়াল, পানি সরবরাহ, রিজার্ভ ট্যাংক, এ্যাপ্রোচ রোড, ব্রিজ, বিদ্যুতের ৩৩/১১ কেভি রিসিভিং সাব স্টেশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য আনসার ক্যাম্প ও অভ্যন্তরীন সংযোগ সড়কের কাজ করছে শিকদার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ।

মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রধান ফটক মোংলা পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোনের প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুধু শিকদার গ্রুপই সাতটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান নির্মাণের রুপ রেখা চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি ওয়েল টার্মিনাল, ১শ’ ও ১৬০ মেগাওয়াটের দুইটি পাওয়ার প্লান্ট, তিনটি স্টীল মিলর্স, কন্টেইনার লোড-আনলোডের জন্য একটি আইসিডি টার্মিনাল। তাদের এসব উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে। আর প্লট বুকিংয়ের শুরুতে এগিয়ে এসেছে একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে-লাফার্স গ্যাস, এসএমপিসি, নাগা লিমিটেড, হিন্দুস্তানী ইউনিলিভার ও ভার্জার পেইন্ট লিমিটেড।

প্রাথমিকভাবে এখানে ১৬টি প্লট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নূর অ্যান্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দর।  ইপিজেডের পাশেই মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। পশ্চিম পাশে পশুর নদী ও পূর্ব পাশে মোংলা নালা নদী এবং উত্তর পাশে রামপাল উপজেলা। মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল খুলনা বিভাগীয় শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার, রামপালের ফয়লায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দর থেকে ১৫ কিলোমিটার, যশোর বিমান বন্দর থেকে ১০৫ কিলোমিটার এবং ঢাকা শহর থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পদ্মাসেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর ঢাকার দূরত্ব আরও অনেক কমে যাবে।’

বেজা কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শিকদার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বি এম কামাল হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্মাণ কাজ শেষ ও পুরোপুরি চালু  হলে নতুন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশীয় বিনিয়োগকারী ছাড়াও জাপান, কোরিয়া, ভারত, পানামা, তুরস্ক, ইউক্রেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত পুঁজি বিনিয়োগ করবে।

২০১৮ সালের মধ্যে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হবে এবং আগামী বছর বিনিয়োগকারীদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়াসহ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। তাই অভ্যন্তরীন রাস্তা নির্মাণ, ভবন ও প্লটসহ আনুসাঙ্গীক অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুত গতিতে চলছে। পোশাক শিল্প, পাট, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি শিল্পকে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে বলা হয়েছে।

বেজার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,  নৌ, সড়ক ও আকাশ পথে যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনায় রেখে মোংলা বন্দরের স্থাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব মানের অর্থনৈতিক অঞ্চল। মোংলা বন্দর জেটির কাছে হওয়ায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাকে ঘিরে এখানে আকৃষ্ট হবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী।

সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর ও সুন্দরবনের ক্ষতির সব দিক বিবেচনায় রেখে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। আর বিদুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সব প্রস্তুতি রেখেছে বিদুৎ বিভাগ।

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা