নেপালের ত্রিভুবনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পিয়াস রায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বরিশাল মহাশ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়।
এর আগে সকাল ৮টায় পিয়াসের মরদেহ বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে আনা হয়। সেখানে তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। সরকারের কাছে আমার কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, যা হারিয়েছি তা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।’
পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘পিয়াসের আচার-ব্যবহার ভাল ছিল। এভাবে তার চলে যাওয়া মানতে পারছি না।’
পিয়াস রায়ের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামে। পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা পূর্ণিমা রায় বরিশাল নগরীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই ভাইবোনের মধ্যে পিয়াস বড় ছিলেন। বোন শুভ্রা রায় রাজধানীর নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পিয়াস গোপালগঞ্জে সাহেরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজে পড়তেন। এ বছরের ৫ মার্চ তার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষে তিনি নেপালে ঘুরতে যান। ১২ মার্চ তিনি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে নেপালের উদ্দেশে রওনা দেন। বিমানটি নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে তিনিসহ ৪৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি।
দুর্ঘটনার চারদিন পর ১৬ মার্চ দুপুরে বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় নেপালের গেলেও ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। পরে মৃতদেহ শনাক্তের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে ১৯ মার্চ তিনি দেশে ফিরে আসেন। তখন ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আনা হলেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় পিয়াস রায়সহ তিন জনের মরদেহ নেপালে থেকে যায়।
এরপর বুধবার (২২ মার্চ) পিয়াস রায়সহ তিনটি মরদেহ শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকালে নেপাল থেকে দেশে আনার পর ঢাকায় মরদেহগুলো বুঝে নেন স্বজনরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পিয়াস রায়ের মরদেহ বুঝে নেওয়ার পর তা ঢাকা থেকে সরাসরি বরিশালে নিয়ে আসার কথা ছিল। তবে সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনুরোধে রাত ১২টার দিকে পিয়াসের মরদেহ প্রথমে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। সেখানে পিয়াস রায়কে শেষ বিদায় জানান সহপাঠী ও শিক্ষকরা। এরপর ভোররাত ৩টার দিকে বরিশালে আনা হয় তার মরদেহ।
আরও পড়ুন: