X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে দাঁড়ায় লালু পাগলা

মাজহারুল হক লিপু, মাগুরা
২৩ মার্চ ২০১৮, ১৬:১৫আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫৯

মাগুরা

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী যখন যশোরে ঢুকতে শুরু করে, তখন কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুট করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হানাদারদের সাঁজোয়া বহরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান লালু পাগলা। পাকিস্তানি সেনাদের অবিরত গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। স্বাধীনতার অদম্য বাসনায় রাজপথ লাল হয়ে যায়। লালু পাগলার উদ্ধত স্লোগান আর বুক থেকে রক্ত ঝরার সেই দৃশ্য আজও নাড়া দিয়ে যায় সেদিনের উপস্থিতিকে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।  

এলাকার প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দিয়ে ২৩ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে তৎকালীন মাগুরা মহকুমা সদরে প্রবেশ করে। সেসময় হানাদার বাহিনীর প্রথম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় বর্তমান মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়নের আলমখালি এলাকার সুরেন বিশ্বাস ওরফে সুরেন কুলু। পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় আলমখালি বাজার এলাকায় পৌঁছেই বাজারের অদূরে মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে নিরীহ সুরেনকে ।’

লালু পাগলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সুরেন কুলুকে হত্যার পর মাগুরা শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পারনান্দুয়ালি এলাকায় অবস্থিত কছুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সাঁজোয়া বহর পৌঁছায় পাকিস্তানি বাহিনী। এসময় বর্তমান সদর উপজেলার বগিয়া ইউনিয়নের বাগবাড়িয়া গ্রামের লালু পাগলা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ঘাতকদের গাড়িবহরের সামনে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। লালু পাগলার এই আত্মদান সেদিন মাগুরাবাসীকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।’

এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সাল। ২৫ মার্চের ভয়াল কালো রাত। রাজধানীতে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এসব খবর এলাকায় পৌঁছালে উত্তেজনা শুরু হয় স্থানীয়দের মধ্যে। এর মধ্যেই মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে হানাদার বাহিনী। দেশজুড়ে স্থানীয়রাও প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে এপ্রিল মাসে যশোরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি বাহিনী। হানাদার বাহিনীর প্রবেশের সময়ই  প্রতিবাদ করে লালু পাগলা। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে গাড়ি বহরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। এর পরেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে তার প্রাণহীন দেহ। পাকিস্তানিদের গুলিতে লালু পাগলার মৃত্যু স্থানীয়দের নাড়া দিয়ে যায়।

মাগুরার ইতিহাস গবেষকরা জানান, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী মাগুরায় প্রবেশ করতে শুরু করে। তারা সীমাখালী ও আলমখালী দিয়ে মাগুরায় প্রবেশ করে। দুপুরের পর বর্তমান মাগুরা-যশোর মহাসড়ক পথে সীমাখালী হয়ে মাগুরা প্রবেশের সময় স্থানীয় আনসাররা পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করে। এসময় কয়েকজন আনসার সদস্য নিহত হন।

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কমিটিতে পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমায় ফি নেওয়া যাবে না
কমিটিতে পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমায় ফি নেওয়া যাবে না
বিচ্ছেদের পর প্রতারণার অভিযোগে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
বিচ্ছেদের পর প্রতারণার অভিযোগে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য আরও সুবিধা চায় সংসদীয় কমিটি
রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য আরও সুবিধা চায় সংসদীয় কমিটি
প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন এমডি মোহাম্মদ আবু জাফর
প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন এমডি মোহাম্মদ আবু জাফর
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ