X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরকে ‘নিউ বিহার’ ঘোষণা দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় বিহারিরা

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
২৩ মার্চ ২০১৮, ২০:১৩আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫৮

সৈয়দপুর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিল বিহারিরা। বাঙালি যখন স্বাধীনতার স্বপ্নে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন তা দমনে নিষ্ঠুরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই অবাঙালিরা। ২৩ মার্চ তারা সৈয়দপুর উপজেলা সদরকে ‘নিউ বিহার’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। শহরজুড়ে শুরু করে ব্যাপক লুটতরাজ ও হত্যাযজ্ঞ। এতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাকিস্তানি সেনারা। সেদিনের সেই ভয়াবহতার স্মৃতি সৈয়দপুরে এখনও রয়ে গেছে। সৈয়দপুরের মুক্তিযোদ্ধারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) মাঠে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর গোটা সৈয়দপুরে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় অবাঙালিদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাঙালিরা। ওই সময়কার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডা. জিকরুল হকের নেতৃত্বে সৈয়দপুরের সমস্ত বাঙালি এক কাতারে শামিল হয়। সেদিনই সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনায় অবাঙালিরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গোটা শহরে তাণ্ডব চালায়। নারী নির্যাতনসহ নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা।

বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ১৩ জুন উপজেলা শহরটিতে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা বড় ধরনের গণহত্যা চালায়। এদিন শহরের ৪৩৮ জন মাড়োয়ারি পরিবারের সদস্যকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার নামে ট্রেনে তুলে রেলওয়ে কারখানার উত্তর প্রান্তে সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে লুটে নেওয়া হয় তাদের সর্বস্ব। শুধু তাই নয়, সেদিন রক্ষা পায়নি বাঙালি শিশুরাও। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হয়।

তাদের স্মৃতি রক্ষার জন্য সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও শহরের ডাকবাংলো মোড়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও আজও তা শেষ হয়নি। স্থানীয়রা জানায়, সৈয়দপুরে অবাঙালিরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের এখনও প্রভাব রয়েছে। এ কারণে সেখানকার বধ্যভূমি বা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।

জেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ হয়েছেন ৭১ জন। বর্তমানে জেলায় ৮৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। আরও ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ১৩০ জন মারা গেছেন। অসুস্থ ও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১১৬ জন।

এ জেলায় চিহ্নিত গণকবর (ব্দ্ধভূমি) রয়েছে ২৫টি। এরমধ্যে গোলাহাট বদ্ধভূমি আজও অবহেলা, অযত্নে পড়ে আছে। পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে। যে কয়েকটি বদ্ধভূমি সংস্কার করা হয়েছে তাও আবার অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বধ্যভূমির স্মৃতি ও শহীদদের তালিকা ৪৬ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি যথাযথভাবে।

বদ্ধভূমিগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণে বাঙালিদের পিঠে চাবুক মেরে কাজ করানো হতো। তাদের অনেকে এখনও জীবিত। তাদের রক্ত-ঘামে নির্মিত বিমানবন্দরটির নাম হতে পারতো ‘মুক্তিযুদ্ধ বিমানবন্দর’।

 

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের