X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা ওয়াসার প্রকল্পে ত্রুটির অভিযোগ, তিন এলাকায় পানি সংকটের আশঙ্কা

খুলনা প্রতিনিধি
২৪ মার্চ ২০১৮, ১২:৩৮আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৮, ১৫:০৫

খুলনা ওয়াসা (ছবি: সংগৃহীত) ওয়াসা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে খুলনা মহানগরীর তিনটি এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণে ভুল রয়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হবে মীরেরডাঙ্গা, সোনাডাঙ্গা ও আলকাতরা মোড় এলাকার মানুষের। তবে ওয়াসার কর্মকতারা এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, পানি সরবরাহে কোনও ধরনের সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, ১৯৪ কোটি টাকার রিজারভয়ার (জলাধার) ও ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩০ এপ্রিল। কিন্তু এই কাজ শেষ হতে আরও দুই মাস লাগবে। আর পানি সরবরাহ এ প্রকল্পে ওভারহেড ট্যাংকের স্থলে নির্মিত হয়েছে চার্জ ট্যাংক। যার নেতিবাচক প্রভাবে আতঙ্কে রয়েছেন নগরবাসী।

খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, সুষ্ঠুভাবে পানি সরবরাহের জন্য মহানগরীর ১০টি স্থানে ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পাশাপাশি ৭টি স্থানে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজারভয়ার  করারও পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী,  এসব ওভারহেড ট্যাংকের ধারণক্ষমতা হবে ৩০০ থেকে ৫০০ ঘনমিটার পানি। ৭টি স্থানে ট্যাংকের পাশাপাশি ১০ থেকে ২০ হাজার ঘনমিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডিস্ট্রিবিউশন রিজারভয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সব ট্যাংক ও রিজারভয়ার  নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।  কিন্তু ওভারহেডের পরিবর্তে নির্মাণ করা হচ্ছে চার্জ ট্যাংক। ফলে যে তিনটি এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড রিজারভয়ার হচ্ছে না, সে সব এলাকায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞরা।

খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর বর্তমান পানির চাহিদার ৩৭ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ খুলনা মহানগরীর পানি সংকট মোচনের লক্ষ্যে বড় প্রকল্প গ্রহণে খুলনা ওয়াসা, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়। ওই বছরের ১২ আগস্ট এ ব্যাপারে তিন পক্ষ ও বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট। এ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) ফান্ড থেকে ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র  ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা’র ১ হাজার ২৮৪ কোটি ১২ লাখ ৭৮ লাখ টাকা। খুলনা ওয়াসার নির্মানাধীন ট্যাংক

এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে পরিশোধন করে নগরীবাসীকে সরবরাহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনার আওতায়  সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহানগর জুড়ে ১০টি ওভারহেড ট্যাংক এবং ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজারভয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পের আওতায় মহানগরীতে ডিস্ট্রিবিউশন রিজারভয়ার ও ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের বরাদ্দ ১৯৪ কোটি টাকা।

সুষ্ঠুভাবে পানি বণ্টন করতে খুলনা সিটি করপোরেশনকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৭টি রিজারভয়ার ও ১০টি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ করার কথা। ওভারহেড ট্যাংকের নির্ধারিত স্থানগুলো হচ্ছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মীরেরডাঙ্গা রব স্মরণী ও দেয়ানা পশ্চিম পাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের পাশে ও মুজগুন্নী,  ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের পাশে, খালিশপুর চরেরহাট,  সোনাডাঙ্গা মহিলা স্টেডিয়ামের পাশে, ফেরিঘাট, শেরে বাংলা রোডস্থ আলকাতরা মোড়ের আন্ধির পুকুর, রূপসা ঘাট এবং লবণচরা। এগুলোর মধ্যে মীরেরডাঙ্গা, সোনাডাঙ্গা এবং আলকাতরা মোড় এলাকায় শুধু ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে, রিজারভয়ার নেই। ইতোমধ্যে ট্যাংক ও জলাধার নির্মাণের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ট্যাংক নির্মাণে ৪ কোটি টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাঁচামালের যোগান ঠিকমত না হওয়ায় কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না। যা আগামী জুনে শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, ওভারহেড ট্যাংকের ডিজাইন করার জন্য পেক্কা নামের একটি বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়। পেক্কা ছিলেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। তাকে কাজটি না দেওয়ার জন্য ওয়াসার কোনও কোনও কর্মকর্তা বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাতে কান না দিয়ে পেক্কাকেই কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেন। পেক্কা যে ডিজাইন দেন তা ছিল চার্জ ট্যাংকের। চার্জ ট্যাংকে একটি পাইপেই পানি ওঠানো এবং নামানো হয়। ফলে সেটাতে পানি ধরে রেখে সরবরাহ করা যায় না। ট্যাংকের ভালভ খোলার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত পানি দ্রুত বেগে নেমে যায়। আর ওভারহেড ট্যাংকে পানি ওঠানো এবং সরবরাহ করার জন্য পৃথক দু’টি পাইপ থাকে।

খুলনা ওয়াসার এ প্রকল্পে অর্থায়নকারী এডিবির একজন কনসালট্যান্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নির্মিত ট্যাংকগুলো চার্জ ট্যাংক এবং সেগুলো শুধু পানির প্রেশার নিউট্রালাইজ করবে।’ তবে এখনও ট্যাংকগুলোকে ওভারহেড ট্যাংক করার সুযোগ আছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান।

খুলনা ওয়াসার ডিএমডি ও পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক এম কামাল উদ্দীন জানান, মোডিউলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০টি ওভারহেড ট্যাংক (আধুনিক কম্পিউটারাইজ) ও ৭টি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজারভয়ার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। ৭টি রিজারভয়ার থেকেই ১০টি জোনে পানি সরবরাহ করা হবে। ফলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় কোন ধরনের সংকট বা সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। ওভারহেড ট্যাংকগুলো থাকবে অতিরিক্ত হিসেবে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সার্চ ট্যাংক আদলে এগুলো করা হলেও আদতে ওভারহেড ট্যাংকেরই কাজ করবে। ওভারহেড ট্যাংকগুলো কম্পিউটার এনালাইসিস সিস্টেমে চলবে। অতিরিক্ত জেনারেটরও থাকবে। ১০টি জোনকে ২৬টি মিটারিং সিস্টেমের আওতায় নেওয়া হবে। একেকটি এলাকায় নতুন পানি সরবরাহ লাইন চালু করার মাধ্যমে পুরনো লাইনটি বন্ধ করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি এলাকায় সচল করা হবে। কাজটি সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সময়টুকুতে কোনও এলাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা হবে। মহানগরীতে ৪৫ হাজার বাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করে পানি সরবরাহ শুরু করা হলে নগরবাসী ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছন্ন পানি পাবেন।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহমেদ বলেন, ‘জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করে পানি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প মোডিউল অনুযায়ী ওভারহেড ট্যাংকই নির্মাণ করা হয়েছে।’



/এফএস/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি