মোংলা বন্দরের পশুর নদীর হারবাড়িয়া চ্যানেলের ৫ ও ৬ নং বয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় কয়লাসহ কার্গো ডুবির ঘটনায় রবিবার দুপুরে মোংলা থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। দুর্ঘটনার পরও বন্দরের কার্যক্রম ও চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের হারবার বিভাগ।
রবিবার দুপুরে কয়লার মালিক পক্ষে চট্রগ্রামের সাহারা এন্টারপ্রাইজের অপারেশন ম্যানেজার লালন হাওলাদার মোংলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি দাবি করেছেন, দুর্ঘটনায় কোম্পানির ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
একই সঙ্গে ডুবে যাওয়া লাইটার কার্গোর মাস্টার ফরিদ মিয়া দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে মোংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডিতে বলা হয়েছে, লাইব্রেরিয়ার পতাকাবাহী ‘এমভি অভজারভেটর’ নামে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার একটি বন্দর থেকে কয়লা বোঝাই করে ১৩ এপ্রিল মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া চ্যানেলে অবস্থান নেয়। মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া ৫ ও ৬ নম্বর অ্যাংকোরেজে থাকা ওই জাহাজ থেকে প্রায় ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই করে এম ভি বিলাস কার্গোটি শনিবার দুপুর ২টার দিকে চ্যানেলের তীরের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। এরপর রবিবার ভোর রাত ৩টার দিকে ভাটার সময় জাহাজটি চরে আটকে কাত হয়ে ডুবে যায়। এ সময় কার্গোটিতে থাকা ১১ জন নাবিক সাতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। ভাটার সময় জাহাজটির মাস্টার ব্রিজের আশিংক দেখা গেলেও জোয়ারের সময় জাহাজটি পুরোপুরি তলিয়ে যায়।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো.ওলিউল্লাহ বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে কার্গো মালিক উদ্ধার তৎপরতা চালাবেন। তারা ব্যর্থ হলে সেটা আমাদের (মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ) নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এ ব্যাপারে ওই কোম্পানিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।
এদিকে সুন্দরবনে আবারও কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম তিনি বলেন, ‘কয়লাসহ কার্গো ডুবিতে সুন্দরবনের জলজ-প্রাণীজ ও জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হবে। কারণ এ কয়লা সাধারণত ইট ভাটায় ব্যবহার হয়। এ কয়লায় সালফারের পরিমাণ বেশি থাকে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন ডুবে যায়। ২০১৫ সালের ৩ মে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবে যায় সার বোঝাই কার্গো জাহাজ এমবি জাবালে নূর। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবতে-ডুবতে অন্য কার্গোর সহায়তায় মোংলায় পৌছাতে সক্ষম হয় আরেকটি কয়লা বোঝাই কার্গো। ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সুন্দরবনের পশুর নদীতে ৫১০ মে. টন কয়লাবাহী এমভি জিয়া রাজ কার্গো ডুবি হয়। তখন মাস্টারের গাফিলতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিকেলে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর ‘হরিণটানা’ বন টহল ফাঁড়ির কাছে ১২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি সি হর্স-১’ ডুবে যায়। ২০১৭ সালের ৪ জুন দিনগত রাতে হারবাড়িয়া চ্যানেলে ‘এমভি সেবা’ নামে একটি কার্গো তলা ফেটে ডুবে যায়। কার্গোটিতে ৮২৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল স্লাগ ছিল।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে দুদুলতা ধানের আবাদ বৃদ্ধি